রাশিয়ার হামলা থেকে শিশুদের বাঁচাতে মাটির নিচে স্কুল বানাবে ইউক্রেন
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে দেশটির প্রথম ভূগর্ভস্থ স্কুল নির্মিত হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র ইহর তেরেখভ। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা হাজার হাজার শিশুকে ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকির সময়ও নিরাপদে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে। সোমবারও খারকিভ অঞ্চলে ফের রকেট হামলা হয়েছে, যা এখন একটি নিয়মিত ঘটনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রবিবার খারকিভের মেয়র ঘোষণা করেন, ‘এখানেই আমরা ইউক্রেনের প্রথম ভূগর্ভস্থ স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করছি।
’ স্কুলটি সবচেয়ে আধুনিক প্রতিরক্ষামূলক ভবন হিসেবে নির্মিত হবে বলেও জানান তিনি। তবে ভূগর্ভস্থ স্কুলটি কবে খুলবে এবং কতজন শিক্ষার্থী সেখানে পড়তে পারবে সে বিষয়ে মেয়র কোনো তথ্য দেননি।
ইউক্রেন বলেছে, ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৬০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে এবং তিন হাজারটিরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের মতে, ক্রমাগত মারাত্মক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পাশাপাশি গোলাবর্ষণের মধ্যে ইউক্রেনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ স্কুল শিক্ষার্থী বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়াশোনা করছে।
এদের অনেকেই ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন এবং অন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ঠাণ্ডার সময় সেখানে যথেষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাও থাকে না।
গত সপ্তাহে ইইউর মৌলিক অধিকার সংস্থা বলেছে, ২৭ সদস্যের জোটের অনেক স্কুল ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা শিশুদের একীভূত করার জন্য সংগ্রাম করছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় শিশু রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে খারকিভের এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পাঁচটি ভূগর্ভস্থ স্টেশনে তাদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করেছে। স্টেশনগুলোকে তথাকথিত ‘মেট্রো-স্কুল’-এ পরিণত করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দুটি শিফটে ক্লাস নেওয়া হয়। প্রতিটি স্টেশনে পুলিশ সদস্য ও উদ্ধারকারীরা দায়িত্ব পালন করেন।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো সে সময় বলেছিলেন, ‘মেট্রোতে ক্লাস।
আপনি কি কখনো কল্পনা করতে পারেন—ইউক্রেনীয় শিশুরা ভূগর্ভে পড়াশোনা করবে? এটাই এখন আমাদের বাস্তবতা।’
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, যা রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের প্রথম সপ্তাহগুলোতে শহরটিতে ভারী বোমা হামলা হয়েছিল। রুশ সেনারা যখন খারকিভ দখলের চেষ্টা করেছিলেন, তখন স্থানীয় বাসিন্দারা এমনকি শহরের রাস্তায় ভয়ানক লড়াই প্রত্যক্ষ করেছিল। শেষ পর্যন্ত গত শরতে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের সময় তাদের পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়।
সূত্র : বিবিসি