যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে নতুন করে সংঘর্ষ, নিহত ২৫
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ায় নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে দুই দিনের ভয়াবহ এই সংঘাতে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। অবশ্য সিরিয়ার এই অঞ্চলে চলতি মাসেই বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ১০ দিনের সংঘাতে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর এজোর প্রদেশের ধেইবান এলাকায় আসাদ সরকারের অনুগত যোদ্ধা এবং কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মধ্যে দুই দিনের ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক বাহিনী বলেছে, সোমবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তারা ‘এ এলাকায় অনুপ্রবেশকারী শাসকগোষ্ঠীর বন্দুকধারীদের তাড়িয়ে দিয়েছে’। এছাড়া এসডিএফ এবং সশস্ত্র আরব উপজাতিদের মধ্যে এই মাসে ১০ দিনের লড়াইয়ে একই এলাকায় কমপক্ষে ৯০ জন নিহত হয়েছেন।
ব্রিটেন-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, শাসকপন্থি যোদ্ধারা ইউফ্রেটিস নদী পার হয়ে সামনে এলে সর্বশেষ সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ২১ জন শাসক ও তিনজন এসডিএফ যোদ্ধা। এছাড়া নিহত হয়েছেন এক নারীও।
এসডিএফ বলেছে, তাদের অবস্থানে ‘নির্বিচারে বোমাবর্ষণের আড়ালে’ অনুগত যোদ্ধারা ইউফ্রেটিস নদী পার হয়। পরে এসডিএফ যোদ্ধারা নদীর ডান তীরে বোমাবর্ষণ শুরু করে। এই এলাকাটি শাসক বাহিনীর সমর্থনে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
অবশ্য উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর সিরিয়ার এসডিএফ নিয়ন্ত্রণের মূল এলাকায় কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু আইএসের বিরুদ্ধে অভিযানে তারা যে বেশ কিছু এলাকা দখল করেছে, সেখানে আরবরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সিরিয়ার অভ্যন্তরে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের। ব্রিটেন-ভিত্তিক এই পর্যবেক্ষক সংস্থার মতে, আগের সংঘর্ষের পর সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পালিয়ে যাওয়া কিছু আরব যোদ্ধা এই সপ্তাহের হামলায় অংশ নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটনের প্রধান সিরিয়ান মিত্র ছিল এসডিএফ। ২০১৯ সালে ইউফ্রেটিস নদীর বাম তীরে জঙ্গিগোষ্ঠীটিকে পরাজিত করা হয়।
এর আগে ২০১৪ সালে উত্থানের পর সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিজেদের রাজ্য ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করে আইএস; কিন্তু তিন বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে সিরিয়া অংশে নিজেদের অধিকৃত অধিকাংশ এলাকা হারায় এ সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। এর দু’বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইরাকের অধিকৃত অঞ্চলগুলোও তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে সিরিয়ায় ২০১১ সালে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনগণের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে ব্যাপক সহিংসতা চলায় দেশটির সরকারি বাহিনী। সেই সহিংসতার জেরেই জন্ম নেয় একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং একসময় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে, যা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ।
তবে ১২ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার ভূখণ্ডের কিছু অংশ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেলেও বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তেই দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন।