সাম্রাজ্য হারানো ‘রাজা’ তামিম ইকবাল
২০১৯ বিশ্বকাপের পর মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছ থেকে নেতৃত্ব বুঝে পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তার পর বাংলাদেশের ওয়ানডে দলটাকে নিয়ে একক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন তিনি। যার ছাপ ছিল গত সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। তামিমের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ওয়ানডেতে দারুণ করেছে।
ওয়ানডে সুপার লিগে তিন নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ করে নেয় লাল-সবুজ দল। এই দলটিকে নিয়ে তামিমের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। ভারতের মাটিতে দারুণ কিছু করার আশায় ছিলেন তিনি। যার গড়ে দেওয়া সাম্রাজ্যে বাংলাদেশের এত প্রভাব বিস্তার। শেষ পর্যন্ত সেই তামিম-ই ২০২৩ বিশ্বকাপে দলের সঙ্গী হতে পারলেন না। এ যেন সাম্রাজ্য হারানো এক রাজার ভাগ্য বরণ!
জোর গুঞ্জন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চাওয়া ছিল আনফিট কোনও ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী করা হবে না! অথচ তিন দিন আগেই বিশ্বকাপ নিয়ে তামিম স্বপ্নের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন।
এশিয়া কাপ শেষে কয়েকটি গণমাধ্যমকে কোচ হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘‘কেউ যদি এখন এই স্বপ্ন দেখে যে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে, তাহলে আমি তাকে বলবো, ‘ঘুম থেকে জেগে উঠুন।’’
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে হাথুরুসিংহের মন্তব্য সঠিক বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় মোটেও। কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের এমন মন্তব্যে অবাক হয়েছেন দলের সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম, ‘অবশ্যই, কিছু মন্তব্য শুনে অবাক। আমি মনে করি অবশ্যই আমাদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন থাকা উচিৎ। স্বপ্ন না থাকলে কীভাবে অর্জন করবেন?’
তামিমের নেতৃত্বে ওয়ানডে সুপার লিগে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে বাংলাদেশ মোট ৮টি সিরিজ খেলেছে। তার মধ্যে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তনের বিপক্ষে স্বাগতিক বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে। কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে লাল-সবুজ দল। অন্যদিকে, দেশের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও হেরেছে শুধু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
সবমিলিয়ে তামিমের নেতৃত্বে ওয়ানডে সুপার লিগ বাংলাদেশ দারুণভাবেই কাটিয়েছে। এমন সাফল্যের পর বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তামিমেরই। কিন্তু হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে দেন তামিম। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
পিঠের ইনজুরিতে ভোগা তামিম আফগানিস্তান সিরিজ শেষ হওয়ার পর লন্ডনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তার পরামর্শেই পিঠের নিচের দিকের দুটি অংশে ইনজেকশন নেন দেশ সেরা ওপেনার।
এই ইনজেকশন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে থাকে। তবে সেই নির্দিষ্ট সময়টা কতদিনের সেটি বলা মুশকিল। ফলে তামিমের ব্যথা যে কোন সময় ফিরে আসতে পারে-এমনটা জানাই ছিল। এটা মেনে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে হতো তাকে।
রিহ্যাব প্রক্রিয়া শেষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে অবশেষে তামিম মাঠে ফেরেন। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে দারুণ খেলেছেন। উপহার দেন ৪৪ রানের ইনিংস। তবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তামিম জানিয়ে গেছেন, তার অস্বস্তির কথা। পরে নির্বাচক ও মেডিক্যাল বিভাগকে নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
তামিমের বক্তব্য ছিল তাকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হলে যেন তার ফিটনেসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়। এই নিয়েই মূলত আপত্তি ছিল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। সোমবার মধ্যরাতে বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সভা বসেছিল। সেখানে ছিলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। সাকিব এবং হাথুরুসিংহে কোনওভাবেই আনফিট তামিমকে নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে চাননি। শেষমেশ নির্বাচকরা বাধ্য হয়েছেন সাকিবের কথা মেনে নিয়ে দল ঘোষণা করতে।
মিরপুরে আকাশে–বাতাসে যখন এই আলোচনা চলছিল, তখন হুট করে দুপুরের পর মাশরাফি বিন মুর্তজাও মাঠে উপস্থিত হন। প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে কিছুক্ষণ অবস্থানও করেন তিনি। তবে ঠিক কী কারণে তিনি মিরপুরে এসেছিলেন, তা জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সাকিব-তামিম ইস্যুতে কথা বলতেই তার আসা। তবে ইতিবাচক কিছু যে হয়নি, দল ঘোষণার পরই সেটি বোঝা যাচ্ছে।