আজারবাইজানের যুদ্ধে নিহত প্রায় ১০০
আর্মেনীয় নিয়ন্ত্রণাধীন নাগর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। কারাবাখের প্রধান শহরে বিমান হামলার সাইরেন ও মর্টার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
মঙ্গলবার আজারবাইজান নাগর্নো-কারাবাখে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে এবং আরো শতাধিক আহত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের জাতিগত আর্মেনীয় প্রশাসনের একজন প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে এই তথ্য জানিয়েছে।
রুবেন ভারদানিয়ান বলেছেন ‘এটি একটি বড় যুদ্ধ। আজারবাইজান একটি পূর্ণ অভিযান শুরু করেছে। মূলত এটি একটি সাধারণ জাতিগত নির্মূল অভিযান। ইতিমধ্যেই শত শত মানুষ আহত হয়েছে এবং প্রায় ১০০জন নিহত হয়েছে। কিন্তু সবাই তা উপেক্ষা করছে। রাশিয়া নীরব, পশ্চিমারাও তাই।’
এর আগে একটি মাইন বিস্ফোরণ ও অন্য একটি ঘটনায় ১১ আজারবাইজানীয় পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজারবাইজানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতিগত আর্মেনীয় ছিটমহলকে ঘিরে কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা চলছে।
বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, আজারবাইজানীয় সামরিক বাহিনী ‘মিসাইল-কামান হামলার মাধ্যমে যোগাযোগের পুরো লাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে’। অন্যান্য কারাবাখ প্রতিনিধিরা একটি বড় আকারের সামরিক আক্রমণের কথা বলেছেন।
দুই প্রতিবেশী—আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া, নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুবার যুদ্ধে নেমেছে। প্রথমে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এবং আবার ২০২০ সালে।
গত ডিসেম্বর থেকে আজারবাইজান আর্মেনিয়া থেকে ছিটমহলের একমাত্র রুটটি কার্যকরভাবে অবরোধ করেছে, যা লাচিন করিডর নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার বাকুতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্মেনীয় বাহিনীকে তাদের সেনা অবস্থানে ‘পরিকল্পিত গোলাগুলি’র জন্য অভিযুক্ত করে বলেছে, ‘স্থানীয় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম শুরু করে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে…আমাদের ভূখণ্ড থেকে আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েন প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে।’
তারা জোর দিয়ে জানিয়েছে, বেসামরিক মানুষ বা বেসামরিক সুবিধাগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করছে না। পরিবর্তে বলেছে, ‘শুধু বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলো উচ্চ-নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার করে অক্ষম করা হচ্ছে। ’অন্যদিকে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আর্মেনিয়ান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গোলাগুলির অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
এদিকে কারাবাখের আঞ্চলিক রাজধানী খানকেন্দি থেকে মঙ্গলবার আর্টিলারি ও গুলির শব্দ শোনা যায়। আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনীয় পাহাড়ি ছিটমহলে বাস করে। সাংবাদিক সিরানুশ সারগস্যান জানান, তার পাশের একটি ভবনসহ শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে আঘাত করা হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের আজারবাইজানি আক্রমণ সম্পর্কে মাত্র কয়েক মিনিট আগে সতর্ক করা হয়েছিল। ২০২০ সালে যুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতিকে সম্মান করতে তারা উভয় দেশকে অনুরোধ করেছে। ইইউর আঞ্চলিক বিশেষ প্রতিনিধি তোইভো ক্লার বলেছেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি জরুরিভাবে প্রয়োজন’।
২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষের সময় আজারবাইজান কারাবাখের আশপাশের অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করে, যা ১৯৯৪ সাল থেকে আর্মেনিয়ার দখলে ছিল। প্রায় তিন হাজার রুশ শান্তিরক্ষী পরিচালিত একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি তখন থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের কারণে মস্কোর মনোযোগও সরে গেছে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়া ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে’।
এ ছাড়াও আজারবাইজান এই অঞ্চলে সেনা সংখ্যা তৈরির কথা অস্বীকার করেছে। সোমবার তারা দুটি রাস্তায় রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি থেকে কারাবাখে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়—একটি আর্মেনিয়া থেকে লাচিন করিডর হয়ে এবং অন্যটি আজারবাইজানের আগদাম সড়কে।
উত্তেজনা হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু আজারবাইজানীয় কর্মকর্তারা জানান, ২০২০ সালের যুদ্ধের সময় পুনরুদ্ধার করা খোজাভান্দ এলাকায় তাদের গাড়ি একটি ল্যান্ডমাইনের ওপর দিয়ে গেলে চার পুলিশসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ধ্বংস হওয়া গাড়ির ছবি প্রকাশ করেছে। কিন্তু কারাবাখের জাতিগত আর্মেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
এদিকে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আত্মসমর্পণ করবে না, ততক্ষণ সেখানে তাদের ‘সন্ত্রাসী বিরোধী’ অভিযান চলবে বলে ঘোষণা করেছে আজারবাইজান।