রুশ সেনাবাহীনিতে কিউবার নাগরিক নিয়োগে সহায়তা, গ্রেপ্তার ১৭
ইউক্রেনে রাশিয়ার পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করার জন্য কিউবান নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগে সহায়তা করছে কিছু অপরাধী, এমন অভিযোগে দেশটির কর্তৃপক্ষ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বলা হচ্ছে, একটি বড় নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও, তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিউবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপরাধ তদন্তের প্রধান সিজার রদ্রিগেজ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জনের মধ্যে অন্তত তিনজন দ্বীপ দেশটির অভ্যন্তরে রুশ সেনাবাহীনিতে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিছু পরিবার শুক্রবার এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।
স্থানীয় একজনের মা বলেছেন, তার ছেলেকে রাশিয়ায় চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ৬০ বছর বয়সী মেরিলিন ভিনেন্ট বলেন, তার ছেলে ড্যানিস কাস্টিলো (২৭) রাশিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কিউবানদের একজন।
কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল, তার ছেলে এবং অন্যান্য কিউবানরা একটি নির্মাণ কাজের জন্য জুলাইয়ের শেষের দিকে রাশিয়া যাচ্ছে। কিন্তু তারা সবাই আসলে প্রতারিত হয়েছিল।
ভিনেন্ট তার সেলফোনে সাংবাদিকদের একটি ছবি দেখান। যার মধ্যে তার ছেলেও ছিল এবং সেখানে কিছু ব্যক্তি সামরিক পোষাক পরিহিত ছিল।
ছেলে ড্যানিস মাকে বলেছিলেন, সে রাশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। পরিবারটি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল। সেখানের অনেক মানুষই অভাবে ছিল।
ড্যানিস কাস্টিলোর মা বলেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে কিনা জানি না।
আমরা কিছুই জানি না। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন। তারা বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তরুণ কিউবানরা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে নিয়োগ পাচ্ছে এবং প্রতারিত হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে, সরকার রাশিয়া থেকে পরিচালিত একটি নেটওয়ার্ক শনাক্ত করেছে। যাতে রাশিয়া এবং কিউবায় বসবাসকারী কিউবান নাগরিকদের ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়োগ দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, কর্তৃপক্ষ নেটওয়ার্কটিকে দমন ও ভেঙে ফেলার জন্য কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ‘কিউবা ইউক্রেন যুদ্ধের অংশ নয়।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। কিউবা এবং রাশিয়া রাজনৈতিক মিত্র। কিউবানদের রাশিয়া ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন হয় না। অনেকেই সেখানে পড়াশোনা বা চাকরি করতে যান।
এর আগে, মস্কো থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পূর্বে রুশ রিয়াজান অঞ্চলের একটি সংবাদপত্র এই বিষয়ে প্রতিবেদন করেছিল। একটি সামরিক তালিকাভুক্ত অফিস বলেছিল, কিউবা প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু নাগরিক সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য নাম লিখেছে। ‘রিয়াজানস্কিয়ে ভেদোমোস্তি’ নামের ওই সংবাদপত্র কিছু কিউবান নাগরিকের উদ্ধৃত দিয়ে বলেছিল, তারা রাশিয়াকে কিছু অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাতে বা সম্পূর্ণ করতে সহায়তা করছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভবিষ্যতে রাশিয়ার নাগরিক হতে চায়।’
হাভানার প্রসিকিউটর জোসে লুইস রেয়েস রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, সন্দেহভাজনদের অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভাড়াটে বা ভাড়াটে কর্মী নিয়োগ করাসহ অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধ প্রমানিত হলে তাদের ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
রুশ আইন অনুযায়ী, বিদেশী নাগরিকরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করলে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার অনুমতি পায়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রুশ সেনাবাহিনীতে কমপক্ষে এক বছর কাজ করেছেন এমন বিদেশিরা রয়েছেন। তারা প্রথমে নাগরিকত্ব না পেলেও পরে রুশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন সেপ্টেম্বরের শুরুতে বলেছিলেন, অভিবাসীদের জন্য রাজধানীর প্রধান সরকারি অফিসে একটি বিভাগ খোলা হচ্ছে। যেটি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিদেশী নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করার জন্য সহায়তা করবে। গত মাসে রুশ সংবাদ মাধ্যম জানায়, কর্তৃপক্ষ বিদেশিদের নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদেশিদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে।
এদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ বলেছে (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত ছিল), ‘বিদেশি নাগরিকদের শোষণ করছে ক্রেমলিন। যুদ্ধে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো জানায়, আর্মেনিয়া এবং কাজাখস্তানে রুশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে।
সূত্র: এপি