ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখা খোলা চিঠির প্রতিবাদে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। অধ্যাপক ইউনূসের সাথে ‘বিচারিক হয়রানি’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
মি. ভূঁইয়া বলেন, ড. ইউনূসকে ‘বিচারিক হয়রানি’ করা হচ্ছে বলে নোবেল বিজয়ী ও নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ করে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে মি. ভূঁইয়া বলেন, “বিশ্বের জীবিত যারা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আছেন তাদের অধিকাংশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ অনেকে অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। মূল বিবৃতির কারণে বিচার সরাসরি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।”
“ড. ইউনূস শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বেরও সম্পদ। মূল বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তিনি ‘বিচারিক হয়রানি’র শিকার হচ্ছেন। আমার কাছেও বিষয়টা সেরকমই মনে হয়।”
সোমবার প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষর না করার এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান মি. ভূঁইয়া।
যে কারণে প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষর করেননি
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া জানান রবিবার অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি বার্তা পাঠানো হয় যেন কর্মকর্তারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দেয়া বিবৃতির প্রতিবাদলিপিতে যেন পরদিন স্বাক্ষর করেন।
মি. ভূঁইয়া এই প্রতিবাদ লিপিতে স্বাক্ষর করেন নি। কারণ তার মতে, অধ্যাপক ইউনূস ‘বিচারিক হয়রানির’ শিকার হচ্ছেন।
“শ্রম আদালতে মামলা কীভাবে চলে, মামলার গতি কেমন থাকে – তা আমরা জানি। এই মামলাটি (মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা) অস্বাভাবিক গতিতে চলছে”, বলেন মি. ভূঁইয়া।
‘একান্ত ব্যক্তিগত’ মনোভাব থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না।
এমন বক্তব্যের পেছনে মি. ভূঁইয়ার ‘অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ক্ষমতাসীন দলের মতের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন বক্তব্য দেয়ার ঘটনাও সরকারী আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরল। যেকারণে মি. ভূঁইয়ার এ বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে।
এমরান আহমেদ ভূঁইয়া ২০১৯ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
আইন কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করেন রাষ্ট্রীয় পদে অধীনস্থ থাকাকালীন মি. ভূঁইয়া এমন মন্তব্য করতে পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তারা যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, সেহেতু রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা আইনজীবী হিসেবে তাদের দায়িত্ব।
অধ্যাপক ইউনুসের পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতি
অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে নোবেল বিজয়ী ও সুপরিচিত নেতাদের বিবৃতির পর বাংলাদেশের সরকারসমর্থক এবং পেশাজীবী একাধিক সংগঠন ঐ বিবৃতির প্রতিবাদের বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মত সংগঠন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এই মুহুর্তে আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
বর্তমানে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে এবং সেটির শুনানি চলছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে।
গত মাসের শেষদিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আরো ১৮টি মামলা করা হয়।
এছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে ।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১৮টি মামলা দায়ের হয় সেদিনই বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনুসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দেন। ঐ বিবৃতিদাতাদের মধ্যে একশো’র বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
ঐ বিবৃতিতে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলার কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার আহবান জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নিরপেক্ষ বিচারক ও দেশের বাইরের আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের মাধ্যমে পর্যালোচনার আহবান জানানো হয়েছে।
“ আমরা এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে ওনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন,” বিবৃতিতে বলা হয়।
এর আগে গত মে মাসে বিশ্বের ৪০জন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একই ধরণের খোলা চিঠি দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বিষয়ে সম্প্রতি বলেছিলেন যে, যারা তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে তারাই যেন তার জন্য আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠায় ও দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখে যে কোনো অসামঞ্জস্য আছে কিনা।
ঊনত্রিশে অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং এখানে সবকিছু আইনমত চলে। এদেশে বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলি না।”