ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বের করে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিল নাইজার জান্তা
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে নাইজারের শাসক জান্তা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ইতোপূর্বে দেওয়া নির্দেশ অমান্য করার পর নতুন করে এই নির্দেশনার বিষয়টি সামনে এলো।
আর এই পদক্ষেপকে ফ্রান্স ও নাইজারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
নাইজারে গত ২৬ জুলাই মোহাম্মদ বাজুমকে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে অবরুদ্ধ করে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটায় প্রেসিডেন্ট গার্ডের সদস্যরা। এরপর তাকে বন্দি করা হয় এবং অভ্যুত্থানকারীরা ক্ষমতা গ্রহণ করে। আর গত শুক্রবার ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় দেশটির জান্তা।
তবে গত সোমবার কূটনীতিকদের সামনে দেওয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, দেশত্যাগের নির্দেশ সত্ত্বেও নাইজারে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতেই থাকবেন। এসময় ম্যাক্রোঁ নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়া সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে বাজুমের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তকে সাহসী বলেও অভিহিত করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। আর এরপর ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় নাইজারের শাসক জান্তা।
মূলত ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া সেনা কর্মকর্তার এই ধরনের আদেশ দেওয়ার কোনও এখতিয়ার বা কর্তৃত্ব নেই।
রয়টার্স বলছে, নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসোর জান্তাদের কৌশলই অনুসরণ করছে। আর এর কারণ হলো- অভ্যুত্থানের জেরে সৃষ্ট ফরাসি বিরোধী মনোভাবের ঢেউয়ের মধ্যে এই অঞ্চলের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্স যেন নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখে।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গত ২৯ আগস্ট দেওয়া এক বিবৃতিতে নাইজারের জান্তা বলেছে, ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিলভাইন ইত্তে ও তার পরিবারের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রদূতকে বের করে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির জান্তার যোগাযোগ প্রধান এই বিবৃতি ও নির্দেশনাকে সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন।
তবে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বলেছে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলার ক্ষমতা অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তাদের নেই। এছাড়া ফরাসি দূতাবাসের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য অবস্থার মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে এই মন্ত্রণালয়।
এদিকে পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর জোট ইকোওয়াস এবং পশ্চিমা দেশগুলো এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। ইকোওয়াস ইতোমধ্যেই নাইজারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এই দেশটিতে খাদ্য ও সাহায্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া ইকোওয়াস এখন নাইজারে অভ্যুত্থানকারী নেতাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করছে। জোটটি বলেছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে দেশটিতে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত তারা।
ফ্রান্স নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, অভ্যুত্থানকারীদের ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য ইকোওয়াসের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে তারা।
অবশ্য বিদেশি সেনারা আক্রমণ করলে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মালি ও বুরকিনা ফাসোর সেনাদের নাইজারে প্রবেশের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে নাইজারের সামরিক জান্তা।
অন্যদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার খসড়া তৈরি শুরু করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার সম্মত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।