হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের
হার দিয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে গেল সাকিব আল হাসানের দল। পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৬৪ রানে। লঙ্কানরা জিতে যায় ৬৬ বল বাকি রেখে।
শ্রীলঙ্কার মূল বোলিং আক্রমণের চারজন চোটের কারণে খেলতে পারছেন না এই আসরে। কিন্তু অন্যরাই ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেন তরুণ পেসার মাথিশা পাথিরানা, দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৯ রানে ২ উইকেট নেন স্পিনার মাহিশ থিকশানা।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে দলের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনে নামা ব্যাটসম্যান খেলেন ১২২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কা শুরুতে নড়বড়ে থাকলেও পরে সাদিরা সামারাউইক্রামা ও চারিথ আসালাঙ্কার ফিফটিতে জিতে যায় বেশ সহজেই।
বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নতুন দফার দায়িত্ব শুরু হলো পরাজয় দিয়ে।
বাংলাদেশের বিপদ শুরু হয় ম্যাচের শুরু থেকেই। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও তানজিদ হাসানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় দ্রুতই। দ্বিতীয় ওভারেই থিকশানার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে অভিষিক্ত তানজিদ ফেরেন শূন্য রানে।
আরেক ওপেনার নাঈম তিনটি আলগা বল পেয়ে ড্রাইভ করে বাউন্ডারি মারেন বটে, তবে কয়েকটি আলগা বল কাজে লাগাতে ব্যর্থও হন। তাতে নিজের ওপরও চাপ নিয়ে নেন। সেই চাপ সরাতেই অষ্টম ওভারে ধানাঞ্জয়া ডি সিলভাকে তেড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টায় তিনি বিলিয়ে আসেন উইকেট।
২৩ বলে ১৬ রানে ফেরেন নাঈম। ওয়ানডেতে আগের তিন ইনিংস মিলিয়ে তার রান ছিল ১০।
একটু পর পাথিরানার বলে সাকিব যখন আলগা শটে বিদায় নিলেন কিপার কুসাল মেন্ডিসের দারুণ ক্যাচে, বাংলাদেশ তখন বেশ বিপদে। একাদশ ওভারে দলের রান ৩ উইকেটে ৩৬।
সেখান থেকে জুটি গড়ে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন দুজন। ২ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া শান্তর ফিফটি আসে ৬৬ বলে।
৮০ বলে ৫৯ রানের এই জুটি ভাঙে হৃদয়ের বিদায়ে।
ব্যাটিংয়ের শুরুটা সাবলিল করলেও পরে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন হৃদয়। ৪১ বল খেলেও বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। আউট হন ২০ রান করে।
এরপর আর উল্লেখযোগ্য কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। মুশফিকুর রহিমের শুরুটা স্বচ্ছন্দে হলেও উইকেট হারান তিনি পাথিরানাকে আপার কাট খেলে।
এরপর এক প্রান্ত রাখে রাখেন শান্ত, আরেক প্রান্তে দাঁড়াতে পারেননি কেউই। শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের একজনও দুঅঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
শান্ত সেঞ্চুরির সুবাস পেলেও থিকশানার অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শেষ হয়ে যায় তার আশা। বাংলাদেশ শেষ ৪ উইকেট হারায় স্রেফ ২ রানের মধ্যে।
এই পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশের বোলাররা লড়াই করে যথেষ্টই। তাসকিন আহমেদের গতিময় এক ডেলিভারি ছোবল দেয় দিমুথ কারুনারাত্নের মিডল স্টাম্পে। শরিফুল ইসলামের বেশ বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে উইকেট ছুড়ে আসেন পাথুম নিসানকা।
প্রথম রানের দেখা পেতে কুসাল মেন্ডিসের লাগে ১৫ বল। তাকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন সাকিব। ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ভালোই বিপদে শ্রীলঙ্কা।
সেই চাপ আস্তে আস্তে সরিয়ে দেন সাদিরা সামারাউইক্রামা ও চারিথ আসালাঙ্কা। সামারাউইক্রামা শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ সাবলিল। রান বাড়াতে থাকেন তিনি অনায়াসেই। উইকেট ও ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিং দমিয়ে রেখে আসালাঙ্কা মন দেন জুটি গড়ায়।
এই দুজনের ৭৮ রানের জুটি শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে।
দারুণ খেলতে থাকা সামারাউইক্রামা হঠাৎ একটু মনোযোগ হারিয়ে মেহেদির বলে স্টাম্পড হয়ে যান ৭৭ বলে ৫৪ রান করে। এরপর বাজেভাবে উইকেট বিলিয়ে আসেন অভিজ্ঞ ধানাঞ্জায়া ডি সিলভাও। তবে লক্ষ্য কঠিন ছিল না বলে শ্রীলঙ্কাকে বিপদে পড়তে হয়নি।
আসালাঙ্কা ও অধিনায়ক দাসুন শানাকার জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের ঠিকানায়। ৯২ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন আসালাঙ্কা।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে রোববার লাহোরে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৬৪ (নাঈম ১৬, তানজিদ ০, শান্ত ৮৯, সাকিব ৫, হৃদয় ২০, মুশফিক ১৩, মিরাজ ৫, মেহেদি ৬, তাসকিন ০, শরিফুল ২*, মুস্তাফিজ ০; রাজিথা ৭-০-২৯-০, থিকশানা ৮-১-১৯-২, ধানাঞ্জায়া ১০-০-৩৫-১, পাথিরানা ৭.৪-০-৩২-৪, ওয়েলালাগে ৭-০-৩০-১, শানাকা ৩-০-১৬-১)।
শ্রীলঙ্কা: ৩৯ ওভারে ১৬৫/৫ (নিসানকা ১৪, কারুনারত্নে ১, মেন্ডিস ৫, সামারাউইক্রামা ৫৪, আসালাঙ্কা ৬২, ধানাঞ্জায়া ২, শানাকা ১৪; তাসকিন ৭-১-৩৪-১, শরিফুল ৪-০-২৩-১, সাকিব ১০-২-২৯-২, মুস্তাফিজ ৩-০-১২-০, মিরাজ ৫-০-২৬-০, মেহেদি ১০-০-৩৫-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাথিশা পাথিরানা।