প্রিগোজিনকে বহন করা বিমানটি ইচ্ছা করে ভূপাতিত করা হয়ে থাকতে পারে: ক্রেমলিন
তবে কী সত্যি কারো প্রতিশোধের বলি হলেন রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন? কেউ উদ্দেশমূলকভাবে প্রিগোজিনকে বহন করা উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করে থাকতে পারে, এমন কথা মাথায় রেখে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে খোদ ক্রেমলিন।
গত ২৩ অগাস্ট রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে প্রথম প্রিগোজিন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ওইদিন মস্কোর কাছে একটি ছোট্ট বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যেটির যাত্রীদের তালিকায় প্রিগোজিন এবং তার ডান হাত দিমিত্রি উৎকিনের নাম রয়েছে।
বিমানে সাতজন যাত্রী এবং তিনজন ক্রু ছিলেন; যাদের সবাই মারা গেছেন। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে আটটি লাশ পাওয়া যাওয়ায় প্রিগ্রোজিন ও তার সহচরের সেখানে থাকা নিয়ে ধোঁয়াশার তৈরি হয়।
শেষ পর্যন্ত রাশিয়া সেখান থেকে ১০টি মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায়। ওই মৃতদেহগুলোর জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৬২ বছরের প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে রাশিয়া।
কী কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই ওয়াগনার গ্রুপের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়ার সেনাবাহিনীই সেটি গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যে দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রেমলিন।
বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে সাংবাদিকরা তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, “নিশ্চিতভাবেই বিভিন্ন কারণ মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে, যার মধ্যে সম্ভাব্য ওই কারণটিও রয়েছে। আমরা কী নিয়ে কথা বলছি সেটা আপনারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন। যেমন ধরুণ, ইচ্ছাকৃত নৃশংসতা।”
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন প্রিগোজিনকে বহন করা উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খুঁজতে তদন্ত করবে কিনা সে প্রশ্নের জবাব পেসকভ বলেন, পরিস্থিতি এ ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনা থেকে খানিকটা ভিন্ন করেছে। যদিও তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তদন্তকারীরা ঠিক কী ঘটেছে সে সম্পর্কে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি।
“আপাতত রুশ তদন্তের ফলাফল কী আসে তার জন্য অপেক্ষা করুন।”
প্রিগোজিন ছাড়াও বিধ্বস্ত ওই উড়োজাহাজে দিমিত্রি উৎকিন, শীর্ষ সহযোগী ভ্যালেরি চেকালভ, যিনি মূলত প্রিগোজিনের নন-মিলিটারি ব্যবসা দেখভাল করতেন এবং প্রিগোজিনের চারজন বডিগার্ড ছিলেন। উড়োজাহাজটির তিনজন ক্রু মিলে মোট ১০ জন আরোহী ছিলেন।
উড়োজাহাজটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। কী কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক দুই মাস আগে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার প্রতিরক্ষা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। যে বিদ্রোহের আয়ু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মত হলেও সেটি রাশিয়ায় পুতিনের শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। নিজের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে এ আচরণ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্য দারুণ অপমানের ছিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিদ্রোহের ওই ঘটনাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে বর্ণনা করে ওয়াগনার বাহিনীকে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রিগোজিন ব্রাজিলের তৈরি একটি ছোট্ট এমব্রায়ার জেটে ছিলেন। ব্রাজিলের এয়ারক্রাফ্ট ইনভেস্টিগেশন অথরিটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘এই মুহূর্তে’ রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিয়মের অধীনে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবে না বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, “প্রথম কথা হলো, তদন্ত এখনো চলছে। তদন্ত কমিটি নিজের কাজ করছে। “এক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলা যাবে না।”
প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর পুতিন বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে নিহত সবার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ওয়াগনার যোদ্ধাদের রাশিয়ার প্রতি আনুগত্যের শপথনামায় সই করার নির্দেশ দিয়েছেন। রুশ প্রতিরক্ষা নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভের জেরে প্রিগোজিন যেটা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়া হেরেও যেতে পারে।
মঙ্গলবার প্রিগোজিনকে সেন্ট পিটার্সবার্গে তার বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।