সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে যুক্তরাষ্ট্র , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক শীর্ষ বৈঠকে বিদ্যমান সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গভীর করতে সম্মত হয়েছেন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
এক যৌথ ঘোষণায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর ভাষায় দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ‘বিপজ্জনক ও আগ্রাসী আচরণের’ নিন্দা করেছেন তারা।
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সক ইয়ল জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে নিয়ে এ শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করে বাইডেন প্রশাসন।
চীনের বাড়তে থাকা শক্তি ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মুখে ঐক্য প্রদর্শনের উদ্দেশে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে এই তিন দেশ সংকটের সময় পরস্পরের সঙ্গে দ্রুত পরামর্শ করতে এবং পরস্পরের স্বার্থের ক্ষতি করে এমন আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ, উস্কানি ও হুমকির ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে।
তারা প্রতি বছর সামরিক প্রশিক্ষণের মহড়ার আয়োজন এবং ২০২৩ এর শেষ নাগাদ উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রকৃত সময় সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি দেশগুলো ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতেও প্রতিশ্রতিবদ্ধ হয়েছে।
১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোরিয়ায় কঠোর ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছিল জাপান। এই তিক্ত ইতিহাস এ দুইদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে ক্যাম্প ডেভিডের বৈঠক থেকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এলেও আনুষ্ঠানিক ত্রিমুখী জোটের কোনো ঘোষণা আসেনি।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে হওয়া এটিই প্রথম স্বতন্ত্র শীর্ষ বৈঠক। মেরিল্যান্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
চীন ও উত্তর কোরিয়ার বাড়তে থাকা হুমকির মুখে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট ইউন। আর তার ফলেই ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠক সম্ভব হয়েছে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণও এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
এই তিন দেশের নেতারা যে ভাষায় চীনের সমালোচনা করেছেন তা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “সম্প্রতি দক্ষিণ চীন সাগরে অবৈধ সামুদ্রিক দাবিকে কেন্দ্র করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (পিআরসি) বিপজ্জনক ও আক্রমণাত্মক আচরণ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এক্ষেত্রে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলসীমায় স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের যে কোনো একতরফা প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করি আমরা।”
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এই সমালোচনা ও বিরোধিতার প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাসের মুখপাত্র লু পাংইউ বলেছেন, কে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে বিশ্ব সম্প্রদায় তা যাচাই করতে সক্ষম।
ক্যাম্প ডেভিডে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে এটি বাইডেনের প্রথম শীর্ষ বৈঠক। বাইডেন বলেছেন, এই বনময় স্থানটি অনেকদিন ধরেই ‘নতুন সূচনা ও সম্ভাবনার শক্তির’ প্রতীক হয়ে আছে।
কিশিদা ও ইউনকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাকে দেখে যদি মনে হয় আমি সুখি, তাহলে আমি তাই। এটি একটি অসাধারণ বৈঠক ছিল।”
এ বৈঠকের মাধ্যমে এই তিন দেশের জন্য ‘নতুন যুগের’ সূচনা হল বলে মন্তব্য করেছেন বাইডেন।