যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করলো চীনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি
চীনে রিয়েল এস্টেট সংকট গভীর হওয়ার মাঝেই বিশাল চীনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্রান্ডে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্ব থেকে সুরক্ষার জন্য আবেদন করেছে।ঋণদাতাদের সাথে কয়েক বিলিয়ন ডলারের এক চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ঋণভারে জর্জরিত এই কোম্পানিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষা করার অনুমতি দেবে।
এভারগ্রান্ডের বিশাল ঋণ ২০২১ সালেই খেলাপি হয়েছে। সে সময় বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে এই ঘটনাটি হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটিকে নিয়ে উদ্বেগ যত বাড়ছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে চীনের রিয়েল এস্টেট খাতের এসব সমস্যা।
এখন চায়না এভারগ্রান্ডে গ্রুপ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের এক আদালতে দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার লক্ষ্যে আবেদন করেছে।
চ্যাপ্টার-ফিফটিন নামে আইনের এক অধ্যায়ের মাধ্যমে কোন বিদেশি কোম্পানির মার্কিন সম্পদকে রক্ষা করা হয় যাতে কোম্পানিটি তার ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা করতে পারে।
এবিষয়ে বিবিসির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও এভারগ্রান্ডে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
চায়না এভারগ্রান্ডে গ্রুপের রিয়েল এস্টেট শাখার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী চীনের ২৮০টিরও বেশি শহরে কোম্পানিটির ১,৩০০টিরও বেশি নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।
এই গ্রুপের অন্যান্য বহু ব্যবসার মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ এবং একটি ফুটবল ক্লাব।
ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়ার পর এভারগ্রান্ডে তার ঋণদাতাদের সাথে চুক্তি নিয়ে আলোচনার কাজ আবার শুরু করছে।
এই গ্রুপের শুধু রিয়েল এস্টেট খাতেরই মোট আনুমানিক ঋণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি।
এভারগ্রান্ডে গত মাসেই প্রকাশ করেছে যে শুধুমাত্র গত দু’বছরেই কোম্পানিটির ৫৮১.৯ বিলিয়ন ইউয়ান (৮০ বিলিয়ন ডলার) লোকসান হয়েছে।
শুধু এভারগ্রান্ডেই না, গত সপ্তাহে আরেকটি বৃহদায়তন চীনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেনও সতর্ক করেছে যে বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের ৭.৬ বিলিয়ন ডলার লোকসান হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো শেষ করতে বিনিয়োগদাতা খুঁজে পেতে চীনের রিয়েল এস্টেট খাতের আরও কিছু বড় কোম্পানি এখন রীতিমতো সংগ্রাম করছে।
“এই সমস্যার মূলে রয়েছে অসমাপ্ত প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করা। কারণ এর মাধ্যমে অন্তত কিছু হলেও অর্থায়ন পাওয়া সম্ভব হবে,” বলছিলেন আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডি’স অ্যানালিটিকসের স্টিভেন কখরান।
রিয়েল এস্টেট খাতে অনেক ঘর-বাড়ি নির্মাণের আগেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু কোন কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলে, ক্রেতারাও বন্ধকী অর্থ জমা করা থামিয়ে দেন। ফলে এটা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের আয়ের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করে, ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি।
ওদিকে, এমাসের শুরুর দিকে চীন সরকার জানিয়েছে যে সে দেশের অর্থনীতিতে ডিফ্লেশন অর্থাৎ মুদ্রা সঙ্কোচন শুরু হয়েছে এবং দু’বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো জুলাই মাসে ভোক্তা পণ্যের দাম কমেছে।
অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধির অর্থ হলো চীনা জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ কমছে।
বিশ্বব্যাপী চীনা পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানি ও রপ্তানিও তীব্রভাবে কমেছে। ফলে কোভিড মহামারির পর বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করার সম্ভাবনা এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, জুলাই মাসে চীনা রপ্তানির পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় ১৪.৫% কমেছে, আর আমদানি কমেছে ১২.৪%।
এ সপ্তাহের শুরুতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ সব খাতে সুদের হার তিন মাসে দ্বিতীয়বারের মতো কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা করেছে।