সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন করবেন যেভাবে
কিস্তির টাকা জমা দিয়েই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনের জন্য উপযুক্ত নন এমন নাগরিক নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে পরবর্তীতে তা বাতিল হয়ে যাবে; এক্ষেত্রে টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ‘ইউপেনশন ডটগভ ডটবিডি’ ওয়েবসাইট উদ্বোধনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন।
এরপর থেকেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার সুযোগ উন্মোচিত হয়।
বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক টানা ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত নির্ধারিত হারে চাঁদা দিলে বাকি জীবনে তাকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পেনশন সুবিধা দেবে সরকার।
এই স্কিম অনুযায়ী যত বেশি বছর টাকা জমা দেওয়া যাবে, তত বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।
যেমন প্রবাসীরা মাসে ১০ হাজার টাকা করে টানা ৪২ বছর চাঁদা দিতে পারলে তিনি পেনশন পাবেন তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা। কিন্তু একই পরিমাণ টাকা ৩৫ বছর জমা করলেই পেনশন কমে হয়ে যাবে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০ টাকা। ২৫ বছর জমা করলে পেনশন আরও কমে হবে ৮৯ হাজার ৫৪৮ টাকা।
একইভাবে মাসে সর্বনিম্ন যে এক হাজার টাকা করে জমানোর সুযোগ আছে, সেটি ৪২ বছর জমা করতে পারলে মাসে পেনশন হবে ৩৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। একই হারে টাকা ২৫ বছর জমালে পেনশন হবে ৭ হাজার ৯৫৫ টাকা।
মাসে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা করে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে পারলে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা করে পেনশন পাওয়া যাবে।
পেনশনার যতদিন বেঁচে থাকবেন, তিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যত মাস বাকি থাকে ততমাস পেনশন সুবিধা পাবেন।
প্রাথমিকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি কর্মজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অপ্রাতিষ্ঠানিক বা স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা এবং স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য ৫০ শতাংশ সরকারি অনুদানে সমতা স্কিম নামের চারটি সেবা চালু করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশন যেভাবে শুরু করতে হবে
পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে উপরে ডান দিকে রয়েছে নিবন্ধনের ট্যাব। সেখানে ক্লিক করলেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে; যেখানে লেখা থাকবে—‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে, আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এসব স্বীকারোক্তির পর লাল কালিতে লেখা আছে- “উল্লেখ্য, ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না “
এর নিচেই ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় যেতে হবে।
সেখানে লেখা আছে ‘রেজিস্ট্রেশন করুন।’
প্যাকেজসমূহ নির্বাচন করুণ অংশ থেকে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। পরের লাইনে এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই–মেইল আইডি লিখতে হবে। এরপর নিচের দিকে আঁকাবাঁকা ও ইংরেজি বর্ণ ও সংখ্যাগুলো ধারাবাহিকভাবে হুবহু লিখতে হবে খালি ঘরে। এবার ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে যাওয়া যাবে।
পরবর্তী পাতায় যাওয়ার জন্য ক্লিক করতেই আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই–মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে পূরণ করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সংরক্ষিত তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য চলে আসবে। আবেদনকারী চাইলে সেই তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন।
তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’–এর পাতায় যেতে হবে।
স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক—এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।
ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।
নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে। এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।
এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।
পেইমেন্ট অপশন
একটা স্কিম নির্বাচন করে নিবন্ধন সম্পন্ন করলে সেটি সংশোধন করা জটিল বিষয়। সেই হিসাবে আগে পিছে চিন্তা করে টাকা জমা দেওয়ার অপশন সম্পন্ন করতে হবে। সোনালী ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া যাবে।
ভিসা, মাস্টারকার্ড, নেক্সাস ও এমেক্স কার্ড থেকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মধ্যে রকেট, বিকাশ, নগদ, উপায়, ট্যাপ ও ওকেওয়ালেট থেকে টাকা জমা দেওয়া যাবে।