সুদানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে : জাতিসংঘ
চার মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সুদান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে গেছে, দেশ থাকা লোকজনের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে আর স্বাস্থ্যসেবার অভাবে তারা মারা যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর মধ্যে চলা লড়াই রাজধানী খার্তুমকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ লড়াইয়ের কারণে দারফুরে জাতিগত হামলা শুরু হয়েছে। এসব পরিস্থিতি সুদানকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়ে ওই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তোলার হুমকি তৈরি করছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “কৃষকদের ফসল বোনার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে যা তাদের ও প্রতিবেশীদের খাদ্যের যোগান দেবে। চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রকাশিত সর্বশেষ সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গৃহযুদ্ধের কারণে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ সুদান ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে গেছেন, আর অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৪ লাখ ৩৩ হাজার ২৫ জন।
বেসামরিক শাসনে ফেরার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ১৫ এপ্রিল সুদানে লড়াই শুরু হয়, এতে রাজধানী ও এর আশপাশের বেসামরিক বাসিন্দারা নিত্যদিন ধরে চলা লড়াই ও হামলার মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
খার্তুম এবং দারফুর ও কোরদোফান অঞ্চলের শহরগুলোতে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ ব্যাপক লুটপাট, দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকা, যোগাযোগ ও পানিবিহীন অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেনিভায় এক ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রসেল বলেন, “নিহত বহু মানুষের দেহাবশেষ সংগ্রহ, শনাক্ত বা কবর দেওয়া হয়নি।”
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত চার হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের কর্মকর্তা লায়লা বেকার জানিয়েছেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার এক বক্তৃতায় দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহান বলেছেন, “আরএসএফ দেশকে আধুনিক জমানার আগের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। যতদূর কল্পনা করা যায় সব ধরনের অপরাধই ঘটাচ্ছে তারা।”
অপরদিকে আরএসএফ অভিযোগ করে বলেছে, ২০১৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত একনায়ক ওমর আল বশিরের অনুগতদের পরিচালনায় সেনাবাহিনী সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে।
চলমান লড়াইয়ে অস্ত্রবিরতির লক্ষ্যে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা শুরু হলেও এ উদ্যোগ স্থবির হয়ে আছে।
নিরাপত্তাহীনতা, লুটপাট ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ত্রাণ সরবরাহ করতেও হিমশিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।
সূত্র: রয়টার্স