যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ৬৭
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দ্বীপটির পশ্চিম উপকূলীয় শহর লাহাইনায় ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা ধ্বংসস্তূপের ভেতর উদ্ধারকারী দলগুলো নিবিড়ি তল্লাশি চালানো শুরু করার পর থেকেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
জোরালো সতর্কতা জানানোর আগেই কীভাবে দাবানল এত দ্রুত এই ঐতিহাসিক পর্যটন শহরটিজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন হাওয়াইয়ের কর্মকর্তারা।
অঙ্গরাজ্যটির ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৬০ সালে হাওয়াই যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার পরের বছর এক সুনামিতে দ্বীপপুঞ্জটির বিগ আইল্যান্ডে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল, মাউইর দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা শুক্রবার সেটিকে ছাড়িয়ে গেছে; জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দাবানলে লাহাইনার হাজারেরও বেশি ভবন পুড়ে গেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এ সৈকত শহরটির ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ‘শেষ হয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শহরটির পুনর্গঠনে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি বহু বছর প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃতদেহ খুঁজে বের করতে পারদর্শী কুকুরসহ উদ্ধারকারী দলগুলো ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে তল্লাশি চালাতে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
হাওয়াইয়ের মার্কিন সিনেটর ব্রায়ান শাটজ বলেছেন, “পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোর ভেতরে এখনও কেউ প্রবেশ করেনি, এখানেই মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে অনুমান করছি আমরা।”
পরে সিএনএনকে তিনি বলেন, লাহাইনাকে বোমায় হামলায় বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধ অঞ্চলের মতো মনে হচ্ছে যেখানে প্রচণ্ড তাপে ইঞ্জিন ব্লকগুলোও গলে গেছে।
এক বিবৃতিতে মাউই কাউন্টি জানিয়েছে, ঝোপঝাড় থেকে ছড়িয়ে পড়া লাহাইনার আগুন এখনও জ্বললেও ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বীপের আরও দুটি আগুন ৮০ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিপর্যয়ের তিন দিন পরে এটি এখনও পরিষ্কার হয়নি, কিছু বাসিন্দা, আগুন তাদের ঘরবাড়ি গ্রাস করে নেওয়ার আগেই সতর্ক বার্তা পেয়েছিলেন কি না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোনো হুমকির মুখে মাউইয়ির জরুরি সাইরেনগুলো বেজে উঠে দ্বীপবাসিকে সতর্ক করার কথা, কিন্তু দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সময় সেগুলো বাজেনি বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
“প্রকৃতপক্ষে কখন ঠিক কী ঘটেছিল তা নিশ্চিত করার জন্য আমি একটি বিস্তারিত পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছি,” সিএনএনকে বলেছেন হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন।
বাসিন্দাদের সতর্ক করতে টেক্সট বার্তা, ইমেইল না ফোন কল করা হয়েছিল, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।
গ্রিন জানিয়েছেন, একইসঙ্গে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছিল, যখন লাহাইনা বড় ধরনের হুমিকের মুখে পড়ে তখন টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর দমকল কর্মীরা অন্য বড় দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
এভাবেই যেটিকে ছোট একটি দাবানল বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল সেটিই হঠাৎ করে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মাউইর পশ্চিম উপকূলের সবকিছুকে গ্রাস করে নেয়।