পশ্চিমতীরে তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের বহনকারী গাড়ির ভেতরেই তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। অবশ্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, নিহত ওই ফিলিস্তিনিরা হামলা চালাতে যাচ্ছিল। সোমবার (৭ আগস্ট) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বাহিনী তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার ইসরায়েলি সৈন্যরা একটি গাড়িতে গুলি চালায় এবং ওই তিন আরোহীকে হত্যা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুক্ষণ আগে, জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে ‘সন্ত্রাসীদের’ বহনকারী একটি গাড়ি হামলা চালানোর উদ্দেশে যাওয়ার পথে চিহ্নিত করা হয় এবং গুলি চালানো হয়।’
আল জাজিরা বলছে, নিহতদের মধ্যে ২৬ বছর বয়সী নায়েফ আবু সুইকও রয়েছেন, যিনি পশ্চিমতীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরের একজন ‘নেতৃস্থানীয় সামরিক কর্মী’ বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে থাকে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, নিহত নায়েফ আবু সুইক ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে এবং গাজা উপত্যকায় ‘সন্ত্রাসীদের’ পরিচালিত সামরিক কার্যকলাপের অগ্রগতিতে জড়িত ছিলেন।’
কুদস নিউজ নেটওয়ার্কের মতে, ইসরায়েলি হামলার শিকার ওই গাড়িটিতে ১০০ টিরও বেশি গুলি লেগেছে।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ‘যারা আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় এবং যে কোনো সময় এই ধরনের পদক্ষেপ নেবে’ ইসরায়েল।
অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শাসক গোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর এই ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি পেতে হবে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের তিনজন ফিলিস্তিনিকে হত্যাকারী শত্রুরা তাদের অপরাধের মূল্য পরিশোধ ছাড়া রেহাই পাবে না।’
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার মোহাম্মদ জামজুম বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেনিনের দক্ষিণে হওয়া ইসরায়েলি এই হামলায় তিন ফিলিস্তিনির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জামজুম বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ওই গাড়িতে একটি এম-১৬ অস্ত্রও পেয়েছে।’
ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ পার্টির প্রধান মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা একটি ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল আজকে ফের ফিলিস্তিনি তরুণদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার করল। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের অর্থ হচ্ছে- কোনো ধরনের বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই মানুষকে বেআইনিভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে আবারও নতুন করে হাজার হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করতে চলেছে ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে গত জুন মাসে নতুন আরও আবাসন ইউনিট নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদনও দেয় ভূখণ্ডটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি জোট সরকার।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমতীরে সহিংসতা ও প্রাণহানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে এই বছর ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, প্রাণহানির রেকর্ডের কারণে ২০২৩ সাল ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক বছর হতে চলেছে।
বারঘৌতি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলো হচ্ছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসের যুদ্ধ’, যা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে।
তার ভাষায়, ‘গত ৫৬ বছর ধরে সেখানে দখলদারিত্ব চলছে, গত ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ড শেষ না হলে অবশ্যই এই অঞ্চলে কখনোই শান্তি আসবে না।’