বহুল প্রত্যাশা ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমাদের পাঠানো কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র নিয়ে গত জুনে রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেনের সেনারা। এরপর কেটে গেছে দুই মাস।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের লক্ষ্য ছিল— দখলকৃত অঞ্চলগুলো থেকে রুশ বাহিনীকে পিছু হটানো। দুই মাস শেষে সেই পাল্টা আক্রমণ কতটা সফল হয়েছে সেটি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এই পাল্টা আক্রমণ।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর ম্যাপ ঘেঁটে দেখা গেছে— দুই মাস আগে রুশ বাহিনীর দখলে যেসব অঞ্চল ছিল— সেগুলোর খুবই কম অংশ থেকে তাদের হটাতে সমর্থ হয়েছে ইউক্রেন। এখনো ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ রুশ সেনাদের দখলে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দোনেস্কের শহর, পূর্ব দিকের মারিউপোল।
তবে ইউক্রেন যে একেবারে সাফল্য পায়নি এমনটি নয়। তারা বাখুমুতে কিছু অঞ্চল শত্রুমুক্ত করেছে। জাপোরিঝিয়ায় কিছু অঞ্চলে রুশ বাহিনীর প্রতিরোধ ভেদ করতে সমর্থ হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝিয়া ইউক্রেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা যদি এদিকটায় রুশ বাহিনীর দুর্গ ভেদ করতে পারে তাহলে তারা দই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি কেন?
পাল্টা আক্রমণ শুরুর আগে ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের প্রত্যাশা ছিল ইউক্রেনীয় সেনারা তড়িৎ গতিতে তাদের দখলকৃত অঞ্চলগুলো পুনর্দখল করতে পারবে। কিন্তু সেটি হয়নি।
গত দুই মাসে ইউক্রেনের সেনারা ১৬ কিলোমিটার জায়গা অগ্রসর হয়েছেন বলে দাবি করেন স্বাধীন বিশ্লেষকরা। তারা অগ্রসর হয়েছে ঠিকই তবে তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ধীরগতির।
ইউক্রেনের সেনারা পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে তিন দিক দিয়ে আগাচ্ছে। এছাড়া ৭০০ কিলোমিটার বিস্তৃত যুদ্ধের সম্মুখভাগে রুশ বাহিনীর দুর্বল জায়গা খুঁজছে।
তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ সম্পর্কে আগেই বুঝতে পেরেছিল রুশ সেনারা। আর এ কারণে কয়েক মাস ব্যয় করে তারা গড়ে তুলেছে কঠিন দুর্গ। যা সাম্প্রতিক সামরিক ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ।
তারা তিন ধাপে পরিখা, বাঙ্কার, ট্যাংক আটকানোর জন্য কংক্রিটের পিরামিড (কথিত ড্রাগন টিথ) ও খাদ তৈরি করেছে। এছাড়া বিছিয়েছে হাজার হাজার মাইন। যা ইউক্রেনীয় সেনাদের অগ্রসর রুখে দিয়েছে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা গেছে কীভাবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে তারা।
লন্ডনের কিংস কলেজের সামরিক বিশেষজ্ঞ মারিনা মিরন বলেছেন, দক্ষিণ দিকে যে সাফল্য পাওয়ার প্রত্যাশা ইউক্রেন করেছিল সেখান থেকে তাদের সরে আসতে হয়েছে। এছাড়া ক্রিমিয়া পুনর্দখলের যে স্বপ্ন তারা দেখেছে সেটিও এখনই পূরণ হচ্ছে না।
এর বদলে এখন ইউক্রেনের সেনারা দক্ষিণ দিকে তোকমাক অঞ্চলটি দখলের পরিকল্পনা করতে পারে। যেটি দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে অবস্থিত। এই এলাকাটি নিজেদের রসদ পরিবহনে ব্যবহার করছে রুশ বাহিনী।
জুনে তোকমাকে বিশাল বহর নিয়ে গিয়েছিল ইউক্রেনের সেনারা। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয় তারা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পুরো বহরই হারায় তারা।
সূত্র: বিবিসি