দুর্নীতি মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডের পর গ্রেপ্তার ইমরান খান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তোষাখানা দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ইসলামাবাদের একটি আদালত। এ রায়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই লাহোর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে ইমরানকে তার জামান পার্কের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পাঞ্জাব পুলিশ।
ইমরানের আইজীবী ইন্তেজার পাঞ্জোথা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “পুলিশ ইমরান খানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।”
পিটিআই এর পাঞ্জাব শাখা জানিয়েছে, ইমরানকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
লাহোরের পুলিশ প্রধান বিলাল সিদ্দিক কামিয়ানা ইমরানকে গ্রেপ্তার করার কথা নিশ্চিত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, এ রাজনীতিককে রাজধানী ইসলামাবাদে পাঠানো হচ্ছে।
আইনি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় আসছে নভেম্বরে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ইমরানের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে পারে।
রায় ঘোষণার সময় ইসলামাবাদের ট্রায়াল কোর্টে উপস্থিত ছিলেন না ইমরান। তার আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন না। ইমরানের অনুপস্থিতিতেই তোষাখানা মামলার রায়ে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ রুপি জরিমানা করে আদালত।
রায়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (এডিএসজে) হুমায়ুন দিলওয়ার জানান, এ মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
“ইমরান খান সচেতনভাবে তোষাখানার উপহার নিয়ে ইসিপির কাছে বিস্তারিত মিথ্যা তথ্য পেশ করেছেন এবং অসৎ চর্চার জন্য তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন,” বলেছেন এডিএসজে দিলওয়ার।
ইমরানকে পাকিস্তানের নির্বাচনী আইনের ১৭৪ ধারার অধীনে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতের আদেশ পালনের জন্য দণ্ডাজ্ঞার একটি কপি ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধানের কাছে পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছেন এডিএসজে দিলওয়ার।
ডন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এই রায়ের শুনানি হওয়ার পর বিচারক ইমরানের আইনজীবীদের অনুপস্থিতির জন্য বারবার অসন্তোষ জানান। বিবাদীর কৌঁসুলিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি অনেকগুলো সুযোগ দেন।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি রায় ঘোষণা করেন। এর প্রায় ২৯ মিনিট পর ইমরানকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়।
রায় ঘোষণার আগে আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে আশপাশে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুধু আইনজীবীদের আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
ইমরানের আইনজীবী পাঞ্জোথা জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের জেলা আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করছেন তারা।
এক বিবৃতিতে পিটিআই জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি আপিল আবেদন করেছে।
তোষাখানা বিতর্ক
তোষাখানা বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন জানা যায় ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া বিভিন্ন উপহার কিনে পরে সেগুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তখন ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের বিস্তারিত জানাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল; এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দাবি করেছিল তারা।
১৯৭০ এর দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোষাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোষাখানার নিয়ম অনুযায়ী, সরকার ব্যবস্থায় থাকা সব ব্যক্তিতে তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। তবে যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
অভিযোগ দায়েরকারী পিএমএল-এনের মহসিন রানঝা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক অর্থবছরের শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সব সম্পদ কমিশনের কাছে জমা দেওয়া বিবরণীতি ঘোষণা করার কথা।
কিন্তু তা না করায় ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণার আর্জি জানানো হয়েছিল।
তোষাখানা থেকে কেনা উপহারের বিষয়টি ইমরান ‘ভেবেচিন্তে’ লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে; কিন্তু পরে ইমরান কমিশনকে বিস্তারিত না জানিয়ে শুধু স্বীকার করেন, সেগুলো তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএলএম-এন প্রধান নওয়াজ শরিফকে ‘অসৎ’ বলে ঘোষণা করে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি এবং তাকে আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়।
তোষাখানার উপহার নিয়ে ইমরান মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন অভিযোগে গত বছর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন-ইসিপি সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) ধারা অনুযায়ী তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বচানে অযোগ্য ঘোষণা করে।
যা নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন পিটিআই নেতাকর্মীরা।