এবার রাশিয়ার নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
রাশিয়ার নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রুশ নৌবাহিনীর এই ঘাঁটিটি রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী নভোরোসিয়েস্ক বন্দরের কাছে অবস্থিত এবং আর এটি রাশিয়ার রপ্তানি কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
তবে হামলার পর ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার (৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় সামুদ্রিক ড্রোন শুক্রবার ভোরে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী নভোরোসিয়েস্ক বন্দরের কাছে রাশিয়ান নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে এবং পরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ ওই ড্রোনগুলো ধ্বংস করে দেয় বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
নভোরোসিয়েস্ক বন্দরে তেল টার্মিনাল পরিচালনা করে থাকে ক্যাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম। তারা জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় এই হামলার জেরে নভোরোসিয়েস্ক বন্দরে সাময়িকভাবে সমস্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রয়টার্স বলছে, শুক্রবার সকালে নভোরোসিয়েস্কের কাছে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন রাশিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। আক্রমণের এই ঘটনাটি নিশ্চিত হলে তা হবে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কোনও বন্দরে ইউক্রেনের প্রথম হামলা।
ক্যাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম বলেছে, হামলার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ অস্থায়ীভাবে সমস্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। অবশ্য হামলায় ক্যাস্পিয়ান পাইপলাইনের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং ট্যাংকারগুলোতে তেল লোডিংও অব্যাহত ছিল।
স্থানীয় অনলাইন কমিউনিটিতে পোস্ট করা ভিডিও এবং রাশিয়ান অনলাইন নিউজ আউটলেট অ্যাস্ট্রার প্রচারিত ভিডিওগুলোতে সমুদ্রের দিক থেকে আসা গুলিবর্ষণের শব্দের পাশাপাশি উপকূলের অদূরে জাহাজ চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া নভোরোসিয়েস্কের জরুরি পরিষেবাগুলোও বিস্ফোরণের খবর নিশ্চিত করেছে এবং নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোকে এই ঘটনা অবহিত করা হয়েছে বলে রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে। রাশিয়ার এই বন্দরটি কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম।
কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম কাজাখ ক্রুড তেলের প্রধান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির জন্য অনুমোদিত কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানানোর পর সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনীয় কৃষি ও বন্দর অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বন্দর ও শস্য সংরক্ষণাগারে গত বুধবার ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। ভোরের দিকে চালানো এই হামলার ঘটনায় কয়েকটি অবকাঠামোতে আগুনও ধরে যায়। হামলায় অবশ্য হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রয়টার্স বলছে, গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে নিরাপদে শস্য রপ্তানির জন্য চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকার করার পর থেকে কৃষ্ণসাগর এবং সংলগ্ন বন্দরগুলোতে সংঘর্ষ বেড়েছে। এছাড়া রাশিয়ান ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী বা কাছাকাছি ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি বন্দর অবকাঠামো এবং শস্য সংরক্ষণাগারে ধারাবাহিকভাবেই আঘাত হেনে চলেছে।
এছাড়া রাশিয়া তার যুদ্ধজাহাজগুলোতেও সামুদ্রিক ড্রোনের মাধ্যমে ইউক্রেনের আক্রমণের কথা জানিয়েছে। হামলার শিকার এসব যুদ্ধজাহাজ একটি বেসামরিক জাহাজকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিল।
অন্যদিকে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ বার্তাসংস্থা তাস বলেছে, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী শুক্রবার সকালে ক্রিমিয়ার ওপর ১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে এবং ইলেকট্রনিক পাল্টা ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে।