পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত বেড়ে ৪৬
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী সম্মেলনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
রোববার প্রদেশটির বাজাউর জেলার আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী ছোট শহর খার থেকে ২ কিলোমিটার দূরে শানডি এলাকায় জামিয়ত উলেমা ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) এর কর্মী সম্মেলনে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সম্মেলন উপলক্ষ্যে একটি তাঁবুতে জেইউআই-এফের চার শতাধিক সদস্য ও সমর্থক জড়ো হয়েছিল, তার মধ্যেই স্থানীয় সময় বিকালে ৪টার দিকে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়।
বিস্ফোরণে ৪৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছিলেন খাইবার পাখতুনখওয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিয়াজ আনোয়ার।
‘এটি আত্মঘাতী বোমা হামলা ছিল। হামলাকারী মঞ্চের খুব কাছে গিয়ে বিস্ফোরণটি ঘটায়,” বলেছেন তিনি।
বাজাউরের জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নাসীব গুল সোমবার ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, আহত আরও দুইজনের মৃত্যুর পর ওই বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে পাঁচটি শিশু আছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
শানডির ঘটনাস্থল থেকে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করে আছেন, আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এসেছে। এরপর পুলিশের বড় একটি দল ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে।
বাজাউর জেলার জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা সাদ খান ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে জেইউআই-এফের খার তেহশীলের আমির মওলানা জিয়াউল্লাহ জানও আছেন।
রোববার রাতে খাইবার পাখতুনখওয়া পুলিশের মহাপরিচালক আখতার হায়াত খান গণমাধ্যমকে জানান, হামলার ১০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে।
বাজাউরের জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল কামাল জানিয়েছেন, বাজাউরের জেলা হাসপাতালে ১৫০ জনেরও বেশি আহতকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
“৩৫ জনকে টিমারগড় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আর সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা ১৫ জনকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে পেশোয়ারে পাঠানো হয়েছে,” বলেছেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকরাও আছেন।
বাজাউরের হাসপাতালগুলো ও আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রহিম শাহ ডন ডটকমকে বলেন, বিস্ফোরণের সময় সম্মেলনে পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
“আমরা বয়ান শুনছিলাম। হঠাৎ শক্তিশালী বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি চারিদিকে রক্ত। লোকজন চিৎকার করছে, এমনকি আমি গুলির শব্দও পেয়েছি।”
বিস্ফোরণের ধাক্কায় জেইউআই-এফের সমর্থক সাহেবউল্লাহর (২৪) হাত ভেঙে গেছে; তিনি ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, “ঘটনাস্থলজুড়ে মৃত মানুষের পাশে মানুষের মাংস, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, আর কী হল তাই নিয়ে সবাই একেবারে বিভ্রান্ত ছিল।
“শরীরের একটি অংশ হারানো একজনের পাশে পড়েছিলাম আমি। তখন বাতাসজুড়ে মানুষের পোড়া মাংসের গন্ধ।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানের, গণতন্ত্রের শত্রু এবং তাদের নির্মূল করা হবে।”
আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা করেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের প্রত্যন্ত সাতটি জেলার মধ্যে বাজাউর অন্যতম। একসময় অঞ্চলটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের একটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গত কয়েকমাস ধরে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণীয় অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে।
নভেম্বরে পাকিস্তান তালেবান নামে পরিচিতি নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে দেশটির সরকারের আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীটি হামলা বৃদ্ধি করতে শুরু করে। তারা খাইবার পাখতুনখওয়া ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মূলত পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে থাকে। এর পাশাপাশি বেলুচিস্তান প্রদেশের বিদ্রোহীরাও সহিংস তৎপরতা বৃদ্ধি করতে শুরু করে।
সম্প্রতি পাকিস্তানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে দেশটিতে হওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় ৩৮৯ জন নিহত হয়েছেন।