নাইজারে সেনা অভ্যুত্থান: নিরাপত্তা ও বাজেট সহায়তা বন্ধ করল ইইউ
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা দখলে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এমনকি ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা প্রেসিডেন্টকেও আটকে রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নাইজারে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বাজেট সহায়তা বন্ধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
রোববার (৩০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর নাইজারের সঙ্গে সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিত করেছে ইইউ। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমা মিত্র হিসাবে পরিস্থিতি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘অফুরন্ত সমর্থন’ ঘোষণা করার পরই ইইউয়ের এই সিদ্ধান্ত সামনে এলো।
এর আগে গত শুক্রবার প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড ইউনিটের প্রধান জেনারেল আবদুরাহমানে তচিয়ানি নিজেকে নাইজারের নতুন নেতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতা, অর্থনৈতিক দুর্দশা ও দুর্নীতি তাকে ক্ষমতা দখল করতে বাধ্য করেছে।
তবে নাইজারের নতুন এই নেতা ঠিক কোন দেশের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবেন তা নিয়ে এখন পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ নাইজারের প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো এবং মালিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে উভয় দেশই রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নাইজারে অভ্যুত্থান নেতাদের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল। তিনি বলেছেন, অভ্যুত্থানের কারণে নাইজারে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বাজেট সহায়তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হচ্ছে।
ইইউয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০২১-২০২৪ সালের মধ্যে নাইজারে সুশাসন, শিক্ষা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির উন্নতির জন্য তাদের বাজেট থেকে ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছে। এছাড়া সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রবাহ রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে নাইজার। সামরিক প্রশিক্ষণ মিশনের জন্য নাইজারে ইইউয়ের অল্প সংখ্যক সৈন্যও মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়া এই অঞ্চলের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সও শনিবার বলেছে, তারা নাইজারে সমস্ত উন্নয়ন সহায়তা এবং বাজেট সহায়তা স্থগিত করেছে। মূলত পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি ইতোপূর্বে মালি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পরে তার আঞ্চলিক সামরিক সদর দপ্তর নাইজারে সরিয়ে নিয়েছিল।
এদিকে আফ্রিকান ইউনিয়ন নাইজার সেনাবাহিনীকে ১৫ দিনের মধ্যে ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রও পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে একই পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন নাইজারের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাজুমকে আটককারীদেরকে সতর্ক করে দেন। সেসময় তিনি বলেন, এতে করে দেশটির ‘শত শত মিলিয়ন ডলারের সহায়তা’ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
নাইজারে প্রায় ১১০০ সৈন্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে এবং তারা নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সহায়তার জন্য দেশটিকে লাখ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করে থাকে।
তবে রাশিয়ার ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর নেতা এই অভ্যুত্থানকে একটি বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন। ওয়াগনার-অধিভুক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘নাইজারে যা ঘটেছে তা তাদের ঔপনিবেশিকদের সাথে নাইজারের জনগণের সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়।’
তিনি আরও বলেছেন: ‘আজ এই দেশটি (নাইজার) কার্যকরভাবে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করছে।’
বিবিসি অবশ্য ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে উদ্ধৃত করা এই মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, নাইজার বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, দেশটি সরকারি উন্নয়ন সহায়তার অংশ হিসেবে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে পেয়ে থাকে। এছাড়া নাইজার হচ্ছে বিশ্বের সপ্তম-বৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনশালী দেশ।
এমনকি ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হচ্ছে নাইজার। পশ্চিমা দেশগুলো এই দেশটিকে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে ইসলামি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। পূর্বে বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতা বিরাজ করলেও, নাইজারকে সবচেয়ে স্থিতিশীল একটি দেশ হিসাবে দেখা হতো।
নাইজারের বিদেশী মিত্ররা এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদুরাহমানে তচিয়ানির নেতৃত্বাধীন নতুন সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। গত শুক্রবার তাকে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করা হয়।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ এখনও তাকেই বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।