এসএসসিতে পাসের হার জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে, এগিয়ে মেয়েরা
গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, এবার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন, এবার ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এবারের ফল গতবারের চেয়ে খারাপ। গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৮৬ হাজার ২৪ জন।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমলেও এটাকে ‘স্বাভাবিক ফলাফল’ বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তার যুক্তি হলো- করোনার পূর্বের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটি এমন ছিল।
মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও কম বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল। তাই শিক্ষার্থীরা এক ধরনের সুবিধাও পেয়েছিল। যেটা চলতি বছর ছিল না। এজন্য পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।
একই মত আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকারের। তিনি বলেন, করোনার পর এবার পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। এজন্য পাসের হার স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। করোনার আগে ২০২০ সালে পাসের হার এ রকম ছিল। এটাই স্বাভাবিক ধরা হয়। গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসসহ নানা ধরনের ছাড় দেওয়ায় পাসের হার বেশি ছিল। এবার সেই সুযোগ হয়নি। তাই স্বাভাবিক বছরের মতো পাসের হার হয়েছে।
কারোনা মহামারির আগের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায় ২০১৮ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৭.৭৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। ২০১৮ সালের ওই পাসের হার ছিল তার আগের ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার। সে বছর সারা দেশে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছিলেন।
২০১৯ সালে পাসের হার আগের বছরের চেয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে ধস নামে জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে। ২০১৮ সালের চেয়ে সারা দেশে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী কমে ৫ হাজার ৩৫ জন। ওই বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। ২০১৯ সালের ফলাফলে দেখা যায় ৬ বছরের মধ্যে সে বারই প্রথম আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের জিপিএ-৫ প্রাপ্তি লাখের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের ফলাফলে দেখা যায় করোনার দুর্যোগের মধ্যেও বড় সাফল্য এনেছিলেন শিক্ষার্থীরা। মোট গড় পাসের হার ছিল ৮২.৮৭ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে পাসের হার যেমন বাড়ে, জিপিএ-৫ প্রাপ্তিও বাড়ে প্রায় ৩০ হাজার। জিপিএ-৫ প্রাপ্তি আগের ৫ বছরের রেকর্ড ভাঙে।
এ বছরের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, সরকারের নানা বিভিন্ন উদ্যোগ, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ইতিবাচক আন্তঃসম্পর্ক, শিক্ষকদের প্রযুক্তি নির্ভর পাঠদান, অভিভাবকদের সচেতনতা ও সহযোগিতা এবং শুধু পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সর্বোচ্চ পাস বরিশাল বোর্ডে, সর্বনিম্ন সিলেটে
বোর্ডভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে পাসের হারে সবার ওপরে বরিশাল বোর্ড। আর পাসের হারে পিছিয়ে সিলেট বোর্ড। প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। অপরদিকে, সিলেট বিভাগে পাসের হার ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, যশোরে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ও কারিগরিতে ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
সর্বোচ্চ পাসের হার বিজ্ঞান বিভাগে
এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ২ লাখ ৭৯ হাজার ২১৯ জন ছাত্র অংশ নেন। এদের মধ্যে কৃতকার্য হয় ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ জন। এছাড়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৩ জন ছাত্রী অংশ নিলেও এদের মধ্যে পাস করে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯২৯ জন। গ্রুপভিত্তিক বিজ্ঞান বিভাগে মোট পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৬ শতাংশ।
অপরদিকে মানবিক বিভাগে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯২৮ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে পাস করেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৪১০ জন। এছাড়া ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩৬ জন ছাত্রী অংশ নিলেও এদের মধ্যে পাস করেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৭ জন। মানবিকে মোট ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়।
এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭২ জন ছাত্র অংশ নেন। এদের মধ্যে পাস করেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া ১ লাখ ২২ হাজার ৩৯১ জন ছাত্রী অংশ নিলেও পাস করেন ১ লাখ ৪ হাজার ২৯ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় মোট পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ।
পাস-জিপিএ ৫, দুটোতেই এগিয়ে মেয়েরা
এ বছর নয়টি শিক্ষা বোর্ডে মোট উত্তীর্ণ ছাত্রের সংখ্যা ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭১ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ৭ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ জন। যার মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ৭৯.৩৪ শতাংশ, ছাত্রীদের পাসের হার ৮২.৩৯ শতাংশ।
এ বছর সব শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের চেয়ে ৪৮ হাজার ৩৩২ বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারা জিপিএ ৫-ও পেয়েছেন বেশি। ছাত্রদের চেয়ে ১৩ হাজার ৬৫০ ছাত্রী জিপিএ ৫ বেশি পেয়েছেন।
৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি
২৯ হাজার ৭১৪ প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছরের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষর্থীারা। এর মধ্যে শতভাগ পাস করে ২ হাজার ৩৫৪টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি। ২০২২ সালে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৭৫টি, আর শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০টি।
গত ৩০ এপ্রিল শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হয় ২৮ মে। সে হিসেবে ৩০ জুলাই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিন পূর্ণ হবে। সাধারণত দুই মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের রেওয়াজ আছে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটলো না।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন।