ফিলিপাইনে টাইফুন ডোকসুরির আঘাতে নিহত ৬
ফিলিপাইনে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে ছয়জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া শক্তিশালী টাইফুন ডোকসুরি তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছে। টাইফুনের প্রভাবে তুমুল বর্ষণ ও তীব্র বাতাসের কারণে বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই দ্বীপ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটের বিমানের বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ফিলিপাইনে টাইফুন ডোকসুরির আঘাতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। সেখানে প্রবল বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে আঘাত হানা ডোকসুরি তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছুটছে। ইতোমধ্যে সেখানেও এই টাইফুনের প্রভাব শুরু হয়েছে।
তাইওয়ানের আবহাওয়া ব্যুরো টাইফুন ডোকসুরিকে দ্বিতীয় মাত্রার শক্তিশালী টাইফুন হিসেবে সতর্কতা জারি করেছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে টাইফুন ডোকসুরি দক্ষিণাঞ্চলের তাইওয়ান প্রণালীতে পৌঁছেছে। সেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯১ কিলোমিটার।
বুধবার ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানার পর কিছুটা শক্তি হারিয়েছে ডোকসুরি। তবে দেশটির বিভিন্ন নদীর তীর উপচে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে কয়েক ডজন ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে ফিলিপাইনে।
দেশটির বেঙ্গুয়েট প্রদেশের বুগুইয়াস শহরের এক এলাকায় ভূমিধসে ঘরবাড়ি চাপা পড়ে এক নারী, তার সন্তান ও অন্য দুই শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। পার্শ্ববর্তী বাগুইও শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর মারা মারা গেছে বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এছাড়া দেশটির উত্তরাঞ্চলের ইসাবেলা প্রদেশে সাইকেল-চালিত গাড়িতে রুটি বিক্রি করার সময় নারিকেল গাছ চাপা পড়ে এক নারী মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের আবহাওয়া ব্যুরো এই দ্বীপ ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। একই সঙ্গে সেখানকার প্রধান বন্দরনগরী কাওশিউং ভূমিধসের বিষয়ে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। টাইফুন ডোকুসরির তাণ্ডবের শঙ্কায় এই নগরীতে স্কুল ও দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চীন-শাসিত এই ভূখণ্ডের বিমানের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট স্থগিত ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দক্ষিণ ও পূর্ব তাইওয়ানের মধ্যে রেল পরিষেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সতর্কতা হিসেবে ইতোমধ্যে ৪ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে তাইওয়ান। এই বাসিন্দাদের বেশিরভাগই তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলের পাহাড় ও পূর্ব তাইওয়ানের। কিছু এলাকায় প্রায় শূন্য দশমিক ৭ মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং এক মিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তাইওয়ানের আবহাওয়া ব্যুরো।
ঝড়ের কারণে ইতামধ্যে তাইওয়ানে ১৫ হাজার ৭০০টিরও বেশি পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় সচল করার চেষ্টা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সকালের দিকে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে এই টাইফুন আঘাত হানতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বুধবার চীনের জাতীয় আবহাওয়াবিষয়ক কেন্দ্র দেশটিতে টাইফুন ডোকসুরির সতর্কতা সংকেত কমলা থেকে লালে উন্নীত করেছে।
পূর্ব সতর্কতা হিসেবে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদেদের শুকনো খাবার, ওষুধ, মোমবাতি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মজুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।