এরদোয়ান সম্মতি দিলেও সুইডেন শিগগিরই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারছে না
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তার দেশের চূড়ান্ত সম্মতি দেবে তুর্কি পার্লামেন্ট। অক্টোবরের আগে পার্লামেন্টে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হবে না। বুধবার তিনি এই মন্তব্য করেছেন। ফলে অক্টোবরের আগে ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার ন্যাটো ঘোষণা দিয়েছিল, সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে সম্মতি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরপর বুধবার তিনি এই বিষয়ে প্রথম কথা বলেন। বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি বলেছেন, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পার্লামেন্ট। তুর্কি পার্লামেন্টের সমর্থন পেতে সুইডেনের আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
২৭ জুলাই পর্যন্ত তুরস্কের পার্লামেন্টের অধিবেশন থাকলেও এরদোয়ান বলেছেন, অক্টোবরের আগে বিষয়টি পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে না।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এরদোয়ানের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে হয়ত সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ের তুরস্কের চূড়ান্ত সম্মতি নয়। তার এই মন্তব্যে বেশ কয়েকটি ন্যাটো মিত্র দেশ হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা আশা করেছিল, গত বছর ধরে এই বিষয়ে সম্মতি নিয়ে টানাপড়েনের হয়ত অবসান হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
এরদোয়ান বলেছেন, সুইডেনের উচিত তুরস্কের নিরাপত্তা উদ্বেগ নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি এখনও দরকষাকষির এই হাতিয়ার হাত ছাড়া করতে রাজি নন।
লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে সাংবাদিকদের এরদোয়ান বলেছেন, আগামী দুই মাসে পার্লামেন্টের কোনও অধিবেশন নেই। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো বিষয়টি যতটা সম্ভব ঝামেলা ছাড়াই চূড়ান্ত করা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ করে। এরপর দীর্ঘদিনের সামরিক নিরপেক্ষতা পরিহার করে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। শুরুতে উভয় দেশের যোগদানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তুরস্ক। কয়েক দফা আলোচনার পর ফিনল্যান্ডের প্রস্তাবে সম্মতি দেয় আঙ্কারা। তবে সুইডেনের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া থেকে এত দিন বিরত ছিল এরদোয়ানের সরকার। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের কারণে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে এক বছরের বেশি সময় ধরে আপত্তি জিইয়ে রাখে তুরস্ক।
তুরস্কের সম্মতি পেতে সুইডেন নিজেদের সংবিধানে পরিবর্তন, নিজেদের সন্ত্রাসবিরোধী আইন কঠোর, তুরস্কে অস্ত্র রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং এরদোয়ান প্রশাসনের অনুরোধে ছোট্ট একদল মানুষকে আঙ্কারা পাঠানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কিন্তু সুইডেনের আদালত তুরস্কের অনুরোধ করা অপর ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়া ঠেকিয়ে দিয়েছে। সুইডেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা দেশটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারবেন না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আইনের আওতায় দেশটিতে কয়েক বার কোরআন পোড়ানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো তুরস্ককে ক্ষুব্ধ করেছে।
এরপর সোমবার ন্যাটো ঘোষণা দেয়, নতুন একটি চুক্তির আওতায় সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে আপত্তি প্রত্যাহার করেছে তুরস্ক।