১৮৯২ সালের জানুয়ারি মাসে তদানীন্তন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী কলকাতায় বাংলার তখনকার ছোটলাটের সভাপতিত্বে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।
আগামী দিনে বাংলা, আসাম আর বার্মার সীমান্তঘেঁষা চিন-লুশাই হিলসের প্রশাসনিক রূপরেখা কী হবে, সেটা স্থির করাই ছিল ওই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য।
ওই অঞ্চলে বসবাসকারী কুকি-চিন-লুশাই (বা কুকি-চিন-মিজো বলেও যাদের অনেকে চেনেন) নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে ব্রিটিশদের ততদিনে অন্তত পাঁচটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, আরও তিনটি হওয়ার অপেক্ষায়।
কলকাতার সেই ‘চিন-লুশাই কনফারেন্সে’র পরই স্থির হয়েছিল, এই জাতিগোষ্ঠীর বাস যে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তা তিনটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে – চিন হিলস বার্মার, লুশাই হিলসের দক্ষিণভাগ বাংলার আর উত্তরভাগ আসামের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ফলে যে কুকি, চিন ও লুশাইরা নিজেদের একই এথনিসিটি, একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লোক বলে মনে করেন – তাদের মধ্যে সীমান্তের বিভেদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল সেই সোয়াশো বছরেরও বেশি আগে।
নৃতাত্বিক বিশেষজ্ঞরা ওই জাতিগোষ্ঠীগুলোকেই আজকাল একত্রে ‘জো’ বলে অভিহিত করে থাকেন। এদের মধ্যে আর একটা মিল হল ধর্মীয় বিশ্বাসে তারা বেশির ভাগই খ্রিষ্টান।
আজ ভারতের মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড রাজ্য, মিয়ানমারের চিন স্টেটে চিন হিলস ও সন্নিহিত এলাকা এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে তাদের বসবাস – অর্থাৎ এখন কুকি-চিন-লুশাইদের চিরাচরিত বাসভূমির বুক চিরে গেছে তিনটি দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা।
তবে গত দু-আড়াই বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যা তিন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ‘জো’-দের আবার কাছাকাছি এনেছে – আর কিছুটা কাকতালীয়ভাবে সেই সব ঘটনাবলীর ‘এপিসেন্টার’ হয়ে উঠেছে ভারতের মিজোরাম।
যেমন, ২০২১র ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সে দেশের সেনা চিন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে – তারপর থেকে কম করে হলেও অন্তত পঞ্চাশ হাজার চিন নারী-পুরুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে লাগোয়া মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সংঘাতের জেরে বেশ কয়েকশো কুকি-চিন (যাদের বাংলাদেশে অনেকে ‘বম’ বলে ডাকেন) সীমান্ত পেরিয়ে মিজোরামের লংৎলাই জেলার আশ্রয় শিবিরগুলোতে রয়েছেন।
ওদিকে মাসদুয়েক আগে ভারতের মণিপুরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেও অন্তত বারো হাজার কুকি ঘরবাড়ি ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছেন – এবং তাদেরও প্রায় সবারই অস্থায়ী ঠিকানা এখন সেই একই, মিজোরাম।
ছোট্ট রাজ্য মিজোরাম বাইরে থেকে আসা এই হাজার হাজার লোককে নিজেদের ভাইবোন মনে করে বলেই তাদের আশ্রয় বা খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করেছে – কিন্তু সার্বিকভাবে ‘জো’-দের বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিবাদও কিন্তু সেখানে দানা বাঁধছে।
পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন, যে ‘জো’ জাতিগোষ্ঠীর একটি দীর্ঘ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস আছে, এই ধরনের ‘ডিস্টার্বিং ডেভেলপমেন্ট’গুলো তাদের আবার একযোগে হাতে অস্ত্র তুলে নিতেও উৎসাহিত করতে পারে।
কলকাতা সম্মেলনের লিগ্যাসি
সোয়া শতাব্দীরও বেশি আগেকার চিন-লুসাই কনফারেন্স জো জাতিগোষ্ঠীর ভূগোলে এমন পাকাপাকি সীমানা এঁকে দিয়েছিল যে তারা আজও সেটির কথা ভুলতে পারেন না।
কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ১৮৯২-র ২৫শে থেকে ২৯শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই কনফারেন্সের আগে কুকি-চিন-লুশাইরা যে একই তল্লাটে ছিলেন, সেই একাত্মতার কথা মিজোরাম রাজ্যের রাজধানী আইজলে নানা আলোচনা-অনুষ্ঠান-সেমিনারে এখনও ঘুরেফিরে আসে।
ওই কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেছিলেন অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর, স্যার চার্লস আলফ্রেড এলিয়ট।
যোগ দিয়েছিলেন সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের তাবড় অফিসাররা – যাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত বার্মার চিফ কমিশনার স্যার অ্যালেক্সান্ডার ম্যাকেঞ্জি ও আসামের চিফ কমিশনার উইলিয়াম ই ওয়ার্ড।
মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: পুন খ্যান পাউ-এর গবেষণা বলছে, যদিও ওই কনফারেন্সে অধিকাংশের মত ছিল সমগ্র চিন-লুসাই হিলসকে একটি প্রশাসনিক ছাতার তলায় আনা উচিত, সেই সুপারিশ কিন্তু কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।
আসলে বার্মার চিফ কমিশনার কিছুতেই চিন হিলসের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি হননি। স্যার অ্যালেক্সান্ডার ম্যাকেঞ্জির অভিমত ছিল চট্টগ্রাম বা শিলংয়ের পরিবর্তে রেঙ্গুন থেকে ওই অঞ্চলটি শাসন করা অনেক সহজ হবে।
গভর্নর জেনারের বা বড়লাট লর্ড ল্যান্সডাউনও পরে সেই পরামর্শই মেনে নেন। ওই বছরেরই ২রা অগাস্ট ভারত সরকার রেঙ্গুনে চিফ কমিশনারের অফিসে টেলিগ্রাম পাঠায় : “চিন হিলস এখনকার মতো বার্মার অধীনেই থাকবে।”
সেই নির্দেশ পরে আর কখনোই পাল্টায়নি – চিন স্টেট ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়া বার্মারই (অধুনা মিয়ানমার) অংশ হিসেবে থেকে গেছে।
অন্যদিকে সাতচল্লিশের ভারতবর্ষ ভাগের ফলে কুকি-চিন-মিজোদের শত শত বছরের নিরবচ্ছিন্ন আবাসভূমি তিন দেশে তিন টুকরোয় বিভক্ত হয়ে গেছে।
তবে এই অঞ্চলের লোকজন যখনই নিজেদের জাতিসত্ত্বার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন, তখনই কিন্তু তারা পাশের দেশে থাকা একই এথনিসিটির লোকজনের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন।
যেমন ১৯৬৬ সালে সুপ্রিম লিডার লালডেঙ্গার নেতৃত্বে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট যখন ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে, তখন তারা আশ্রয় পেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের পার্বত্য চট্টগ্রামে। প্রায় দীর্ঘ বাইশ বছর মিজো গেরিলারা সেখানেই ছিলেন।
তারও আগে ১৯৬৪তে বার্মায় চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট যখন স্বাধীন চিনল্যান্ডের দাবিতে লড়াই শুরু করে, ভারতের কুকি-চিন-মিজোরাও তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আজও মিয়ানমারের চিন ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ) ও চিন ন্যাশনাল আর্মির (সিএনএ) বিদ্রোহীরা মিজোরামে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন, স্থানীয়দের পূর্ণ সমর্থন আছে তাদের প্রতি।
অন্য দিকে বাংলাদেশে কিছুকাল আগে তৈরি হওয়া ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ বা কেএনএফের প্রতিও মিজোরামে সহানুভূতির কোনও অভাব নেই – একই কথা খাটে মণিপুর থেকে পালিয়ে আসা কুকিদের ক্ষেত্রেও।
‘জো’ জাতীয়তাবাদের পুনর্জন্ম?
ওই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ যে ‘বিচলিত করার মতো’, সে কথা মানলেও তিনটি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কুকি-চিন-মিজোদের মধ্যে তা এখনই কোনও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্ম দেবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।
মিজোরাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জে ডাউঙ্গেলের কথায়, “জো-রা নানা প্রান্তে নির্যাতিত হলেও তারা কিন্তু এখনই কোনও সার্বভৌম স্বদেশভূমির জন্য লড়াই লড়ছেন না। বরং এক এক জায়গায় তাদের আন্দোলনের দাবিটা এক এক রকম।”
আইজল থেকে টেলিফোনে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “মিয়ানমারে যেমন গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চিনরা লড়ছেন সামরিক জুনটার বিরুদ্ধে। তারা মিয়ানমার থেকে আলাদা হতে চান না, শুধু চান চিন স্টেটে একটি স্বশাসিত অঞ্চল।”
“ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও সুবিধা-বঞ্চিত কুকি-চিনরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভেতরেই নিজস্ব অটোনোমাস রিজিয়নের দাবি জানাচ্ছেন।”
ভারতের ভেতরে মণিপুরে আবার কুকিদের সমস্যাটা অন্য জায়গায় – অধ্যাপক ডাউঙ্গেলের মতে সেখানে সরকার ও প্রশাসন মেইতেইদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে সংখ্যালঘু কুকিদের নাগরিকের প্রাপ্য সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
“এটাকে আমি একটা সমাপতনই বলব যে এই সবগুলো ঘটনাই একসঙ্গে ঘটছে – যার তীব্র অভিঘাত এসে পড়ছে মিজোরামে।”
“এই সাঙ্ঘাতিক ত্রিমুখী চাপ মিজোরাম কতদিন হাসি মুখে সামলাতে পারবে বলা খুব কঠিন। আরও বেশিদিন এই পরিস্থিতি চললে তার পরিণতি কী হতে পারে সেটা ভেবেও আমি উদ্বিগ্ন”, বলছিলেন জে. ডাউঙ্গেল।
দিল্লির জেএনইউ-তে স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ও সমাজতাত্ত্বিক জয় পাচুয়াউও মনে করেন সার্বিক পরিস্থিতি অবশ্যই উদ্বেগজনক – তবে এখনই তা ‘জো’ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কোনও ‘সমন্বিত আইডেন্টিটি মুভমেন্ট’ ট্রিগার করবে বলে মনে হয় না।
“হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে এই জাতিগোষ্ঠীর একটা অংশ একদিন ‘গ্রেটার মিজোরাম’ গঠনের দাবিতেও আন্দোলন করেছে, তবে সেই কাঙ্ক্ষিত বৃহত্তর জো-ভূমিতে মিয়ানমার বা বাংলাদেশের অংশকে কখনোই অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়নি”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন জয় পাচুয়াউ।
“দ্বিতীয়ত, এই জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে এথনিসিটির মিল যেমন আছে, তেমনি ফারাকও কিন্তু কম নেই। জো-দের মধ্যে আলাদা আলাদা যে নৃগোষ্ঠীগুলো, তাদের মধ্যে রীতিমতো সূক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও আছে”, জানাচ্ছেন তিনি।
সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দৃষ্টান্ত দিয়ে জয় পাচুয়াউ আরও বলছিলেন, পূর্ব ইউরোপে হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ডের মতো দেশগুলো যেভাবে যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনিয়ানদের জন্য নিজেদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল আজকের মিজোরামও ঠিক সেভাবেই আশেপাশের অঞ্চল থেকে আসা বিপন্ন কুকি-চিনদের জন্য দ্বার অবারিত করে দিয়েছে।
“পোলিশ বা হাঙ্গেরিয়ানরা এটা করেছে কারণ তারা মনে করে ইউক্রেনের লোকেদের সঙ্গে তাদের জাতিগত সাদৃশ্য আছে।”
“কিন্তু তাই বলে তো তারা তো আর ইউক্রেনিয়ান হয়ে যায়নি! মিজোরামের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা তাই”, ব্যাখ্যা করেন মিস পাচুয়াউ।
দিল্লি আর আইজলের রাজনীতি
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে আসা কুকি-চিনদের মিজোরাম সরকার বা স্থানীয় জনগণ, চার্চ সব ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও ভারত সরকার কিন্তু তাদের আজ পর্যন্ত শরণার্থীর মর্যাদা দিতেই রাজি হয়নি।
শরণার্থীর স্বীকৃতি তো দূরস্থান – তাদের খাওয়া-পরা কিংবা মাথার ওপর ছাদের জন্যও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখনও একটি পয়সাও খরচ করেনি।
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা, যার দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট বিজেপিরই শরিক, তিনিও এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভ গোপন করতে পারছেন না।
মাসকয়েক আগে আইজলে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জোরামথাঙ্গা জানিয়েছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ – সবাইকে আমি বারে বারে অনুরোধ করেছি এদেরকে শরণার্থী না-বলতে পারুন, নেহাত মানবিক কারণে খাওয়া-পরার ব্যবস্থাটুকু অন্তত করে দিন!”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই অনুরোধেও কোনও কাজ হয়নি। আসলে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদেই ভারত সরকার সে দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের থেকে এক রকম চোখ ফিরিয়ে আছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছ’মাস আগে ভারতে আসা বেশ কয়েকশো কুকি-চিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য – ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কে কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে বলেই তাদের শরণার্থী বলে স্বীকার করা দিল্লির পক্ষে সম্ভব নয়।
মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এমএনএফ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সাবেক পার্লামেন্টারিয়ান ভ্যান লালজাওমাও তাই কিছুটা হতাশার সঙ্গেই বলেন, “দিল্লির যা খুশি তাই করুক। কিন্তু এই কুকি-চিনরা আমাদের পরিবার, আমাদের মা-বোন-ভাই – তাদের আমরা কিছুতেই ফেলতে পারব না।”
বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি কার্যত স্বীকারই করে নেন, এই শরণার্থীদের অধিকারকে অস্বীকার করায় দিল্লির ওপর তারা আগে থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন, তার ওপর মণিপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা বিজেপি ও এমএনএফের সম্পর্ককে তলানিতে নিয়ে এসেছে।
“মণিপুরে আমাদের কুকি ভাইদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে আর কেন্দ্রীয় সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকায় বসে রয়েছে, এ জিনিস কতদিন আমরা সহ্য করে যাব?”, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মি লালজাওমাও।
এই পটভূমিতেই চলতি বছরের শেষ দিকে (নভেম্বর নাগাদ) মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, কুকি-চিন-মিজো জাতিসত্ত্বার চেতনা এমএনএফকে অচিরেই বিজেপির সঙ্গ ছাড়তে বাধ্য করবে এবং তারা শেষ পর্যন্ত একার শক্তিতেই ভোটে লড়বে।
বস্তুত তিন দেশ জুড়ে কুকি-চিন-মিজোদের সঙ্গে যা ঘটছে, সেই নির্যাতন আর বঞ্চনার অভিঘাতেই যে ‘জো’ জাতীয়তাবাদের রাজনীতি একটা নতুন খাতে বইতে চলেছে তা কিন্তু একেবারে পরিষ্কার।
সূত্র: বিবিসি বাংলা