ওয়াগনার সেনাদের সামনে পথ তিনটি: পুতিন
রাশিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের সশস্ত্র বিদ্রোহ হঠাৎ গোটা বিশ্বের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছিল মস্কোর দিকে, তবে সেই উত্তাপ স্তিমিত হতেও বেশি সময় লাগেনি।
ভারী সাঁজোয়া যানের বহর নিয়ে ওয়াগনার বাহিনী মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসলেও বেলারুশের মধ্যস্থতায় নিজ ব্যারাকে ফিরে গেছে তারা।
সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার ‘স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা দেওয়া’ এই বিদ্রোহ থেকে সরে যাওয়ায় ওয়াগনার গ্রুপের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সশস্ত্র বিদ্রোহ থেকে তাদের সরে দাঁড়ানোকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পুতিন প্রথমবারের মত মিলিশিয়া বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে হওয়া ওই বিদ্রোহ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। সেখানে ওয়াগানার গ্রুপের সামনে তিনটি পথ খোলার রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।
পুতিন বলেন, “আমি ওয়াগনার গ্রুপের সেই সেনা ও কমান্ডারদের ধন্যবাদ জানাই, যারা একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা ভ্রাতৃঘাতী রক্তপাতে যায়নি, শেষ মুহূর্তে তারা থেমে গেছে।”
এসব যোদ্ধাদের সামনে তিনটি পথ খোলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে রাশিয়ার সেবা চালিয়ে যেতে পারবেন তারা, অথবা নিজের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তাদের।
তৃতীয়ত, ওয়াগনার বাহিনীর কেউ চাইলে বেলারুশও চলে যেতে পারবেন।
পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় পুতিন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের নাম উচ্চারণ করেননি।
মস্কোতে বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়ে রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে যেতে সমঝোতার খবরের পর সোমবার এক অডিও বার্তা দেন প্রিগোজিন। যদিও তিনি বেলারুশে পৌঁছেছেন কিনা, সেটি নিশ্চিত নয় বেলারুশ কর্তৃপক্ষ।
অডিওবার্তায় প্রিগোজিন জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের পতন ঘটাতে তার সেনারা মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেনি বরং তারা ওয়াগনারের ধ্বংস এড়াতে চেয়েছিল।
ন্যায়বিচারের জন্য ওয়াগনারের এই পদযাত্রার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উৎখাত করা ছিল না, বলেছেন তিনি।
গত শনিবার হঠাৎ করেই ওয়াগনার সেনাদের একটি অংশ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দিকে যাত্রা করে। ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকি দেন।
মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ওয়াগনার সেনারা এক হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে মস্কোর ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এমন জায়গায় ঠেলে দেয়, যে তিনি তার একসময়ের মিত্র প্রিগোজিনকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ দায়েও অভিযুক্ত করেন, এই সশস্ত্র বিদ্রোহকে অভিহিত করেন ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে।
যদিও শেষ পর্যন্ত ঘটনা বেশি দূর আগায়নি। কয়েকঘণ্টার উত্তেজনার পর বেলারুশের প্রেসিডেণ্টের মধ্যস্থতায় তা প্রশমিত হয়। শনিবার দিনের শেষভাগে ওয়াগনার প্রধান বিদ্রোহে ক্ষ্যান্ত দেন এবং সেনাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু স্বল্প সময়ের এ বিদ্রোহের ঘটনা রাশিয়ার মিত্র কিংবা শত্রু উভয়ের মধ্যেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এমন বিদ্রোহের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার থাকা দেশ রাশিয়ায় কী ঘটতে চলেছে সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে সবাই।