পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ফিলিস্তিনি এক কিশোর নিহত হয়েছে। পশ্চিম তীরের একটি চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গুলিবর্ষণের পর সেনা সদস্যরা পাল্টা গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক নিরাপত্তারক্ষী। শরিবার (২৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে কালান্দিয়া সামরিক চেকপয়েন্টে হামলার পর এক ফিলিস্তিনি কিশোর মারা গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা। নিহত ওই কিশোরের নাম ইসহাক হামদি আলজউনি।
১৭ বছরের এই কিশোর শনিবার পশ্চিম তীরের ওই চেকপয়েন্টে গুলি চালানোর পর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ ও নিহত হন। এ ঘটনায় একজন নিরাপত্তারক্ষীও হালকা আহত হয়েছেন বলে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে।
আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড নামক গোষ্ঠী আলজউনিকে নিজেদের সদস্য হিসেবে দাবি করেছে। এই গোষ্ঠীটি ফাতাহ-এর সশস্ত্র শাখা। ব্রিগেডটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের বীর যোদ্ধারা … কালান্দিয়া চেকপয়েন্টে সরাসরি দখলদার (ইসরায়েলি) সৈন্যদের লক্ষ্য করে হামলা করতে সক্ষম হয়েছে।’
পুলিশ জানিয়েছে, চেকপয়েন্টের ঠিক উত্তরে কুফর আকাব এলাকার কিশোর এই বন্দুকধারী গুলি চালানোর জন্য এম-১৬ রাইফেল ব্যবহার করেছিল। মূলত কালান্দিয়া চেকপয়েন্ট হলো অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রামাল্লার মধ্যে ব্যবহৃত প্রধান প্রবেশ পথ।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত সোমবার সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালানোর পর থেকে গত সপ্তাহে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক গত শুক্রবার পশ্চিম তীরে এসব অভিযানে ইসরায়েলের ‘উন্নত সামরিক অস্ত্র’ ব্যবহারের নিন্দা করেছেন। অন্যদিকে একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সহিংসতা বৃদ্ধির পর ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সাথে ‘সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছে’।
গত সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালালে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯০ জনেরও বেশি আহত হন।
সোমবারের এই সংঘর্ষের সময় ইসরায়েল হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠায় এবং সেটি দিয়ে জেনিন ক্যাম্পের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রকেট নিক্ষেপ করা হয়। গত ২০ বছরের মধ্যে সেদিনই প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটে। মারাত্মক সেই হামলার একদিন পর ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা ফিলিস্তিনি শহর রামাল্লা এবং নাবলুসের মধ্যে একটি পেট্রোল স্টেশনে চার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীকে হত্যা করে।
সেই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি শহরগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়, ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তিতে আগুন দেয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এমনকি একজন ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকেও তারা হত্যা করে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে আবারও নতুন করে হাজার হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করতে চলেছে ইসরায়েল। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহে নতুন আরও আবাসন ইউনিট নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদনও দিয়েছে ভূখণ্ডটির ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থি জোট সরকার।
আর এরই জেরে ফিলিস্তিনের অধিকৃত ভূখণ্ডজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে।