পাল্টা আক্রমণে লড়াইয়ে নেমেছে ৯টি ইউক্রেনীয় ব্রিগেড
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার সেনাদের তুলনায় পশ্চিমা প্রশিক্ষিত ইউক্রেনীয় ব্রিগেডের সেনারা রাতে কার্যকরভাবে লড়াই করছে।
তারা মার্কিন নির্মিত ব্র্যাডলি সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা পদাতিক, বর্ম ও কামান বাহিনীর সমন্বয়ে হামলার কৌশল প্রয়োগ করছে। যা তারা শিখেছে মার্কিন ও অপর পশ্চিমা বাহিনীর কাছ থেকে।
এখন তাদের সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সময়। ৯টি ব্রিগেডে ৩৬ হাজার সেনা–ইউক্রেনের বাইরে গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করেছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক মাস ধরে পশ্চিমা প্রশিক্ষিত সেনাদের দক্ষতা প্রদর্শণের ভিত্তিতে ইউক্রেনের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণের সাফল্য নির্ণয় করা যাবে। রাশিয়ার সেনাদের দখলে থাকা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে এই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন। তাদের দক্ষতা আরও দেখিয়ে দেবে, মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র ইউক্রেনীয় সেনাদের ন্যাটো মানের লড়াইয়ের বাহিনীতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে কি না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই ৪ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র পেয়েছে কিয়েভে।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই নয়টি ব্রিগেড লড়াইয়ের মার্কিন পদ্ধতি প্রয়োগ করবে। প্রমাণ করবে, সমন্বিত অস্ত্রের ব্যবহার, সুসংগত কৌশল এবং সিনিয়র সেনাদের ক্ষমতায়ন করা রেজিমেন্ট রাশিয়ার প্রচলিত কেন্দ্রীয় কমান্ড-কাঠামোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
কিন্তু ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের শুরুটা হয়েছে ধীর গতির। এমনকি যুদ্ধের স্বীকৃত মার্কিন পন্থাও পাল্টা আক্রমণের শুরুতে কোনও যুগান্তকারী অগ্রগতি এনে দেয়নি। যেমনটি, গত বছর এক সপ্তাহের মধ্যে খারকিভ পুনরুদ্ধার করে দেখিয়েছিল ইউক্রেনীয় সেনারা।
র্যান্ড করপোরেশনের সিনিয়র পলিসি রিসার্চার দারা মাসিকট বলেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য এটি পাল্টা আক্রমণের সবচেয়ে কঠিন অংশ। এটিই সেই পর্যায়, যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী নিজেদের অবশিষ্ট কামান ও বিমানবাহিনীর সুবিধা কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে। ইউক্রেনীয়রা যদি রুশ প্রতিরক্ষা রেখা গুঁড়িয়ে দিতে পারে, তখন পরিস্থিতি হয়তো পাল্টাবে।
ইউক্রেনীয় সেনারা গত কয়েক সপ্তাহ ছোট সাফল্য পেয়েছে। কয়েকটি স্থানের রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখার প্রথম সারি ভেঙে কয়েকটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। তবে তারা কয়েকটি পশ্চিমা নতুন ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান হারিয়েছে। ব্রিটেনের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উভয়পক্ষ বড় ধরনের হতাহতের শিকার হয়েছে।
ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল ফেডেরিক বি. হজেস বলেন, এটি খুব পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু তাদেরকে কয়েক মাস ধরে এমন কিছু করার জন্যই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণের প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহকৃত হাউইটজারের মতো অস্ত্র ব্যবস্থার ওপর মনযোগ দেওয়া হয়েছিল। জার্মান সেনাবাহিনী শ্রেণিকক্ষে সেশনের পাশাপাশি ছোট স্কোয়াড নিয়ে মাঠে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পরে আরও বড় ইউনিট থেকে ক্রমশ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে জড়িত ছিল ব্রিটেন, জার্মানিও।
পশ্চিমাদের প্রশিক্ষিত ৯টি ব্রিগেড পুরোপুরি হয়ত এখনও লড়াইয়ে নামেনি। কিন্তু মূল আক্রমণকারী বাহিনীর অগ্রভাগে থাকা সেনারা ইতোমধ্যে তাদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।
পেন্টাগন কর্মকর্তা ও সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাতের লড়াইয়ে ইউক্রেনীয় সুবিধা পাচ্ছে। নাইট-ভিশন চশমা, ব্র্যাডলি ও জার্মান লেপার্ড ট্যাংক রাতের অন্ধকারে রুশ লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস