ইউক্রেনের প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ হবে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

ইউক্রেনের প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ হবে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী

প্রচলিত সমরবিদ্যা অনুসারে, একটি সেনাবাহিনীর আক্রমণ শুরু হওয়া উচিত বিমান হামলায় শত্রুদের ওপর বোমা বৃষ্টির মাধ্যমে। পরে থাকবে স্থল হামলা। আকাশে যুদ্ধবিমানের ছত্রছায়ায় ভূমিতে সেনারা উন্মুক্ত পথ ধরে এগিয়ে যাবে।

কিন্তু ইউক্রেনের এমন কিছুর সুযোগ নেই। বিমানবাহিনী প্রবল শক্তিধর না হওয়ার কারণে ইউক্রেনীয় সেনারা এমন কিছু কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছে যা খুব আধুনিক সামরিক বাহিনী করার দুঃসাহস দেখাবে।

তাদের কৌশলের মধ্যে রয়েছে কয়েক মাস ধরে পরিখা খনন করে অবস্থান নেওয়া রুশ সেনাদের চোখ এড়ানো এবং দীর্ঘ প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ শুরু করা।

শুরুতে ইউক্রেনীয়দের ব্যর্থতা ইঙ্গিত দিচ্ছে তাদের আক্রমণ হবে দীর্ঘ, রক্ষক্ষয়ী এবং গত গ্রীষ্মে খারকিভে রুশ সেনাদের যত সহজে পিছু হটিয়ে দিতে পেরেছিল তারা এবার তা ঘটছে না।

- বিজ্ঞাপন -

ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো রব লি বলেন, যেকোনও পরিস্থিতিতে এটি কঠিন হওয়ার কথা। রুশ সেনারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। খারকিভের ভুল থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে।

রণক্ষেত্রে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই মূলত প্রস্তুতির ওপর নির্ভরশীল। গত বছরের পর থেকে উভয় পক্ষ নিজেদের অস্ত্র, সেনা ও প্রতিরক্ষা অবস্থানকে জোরদার করেছে। বিবদমান উভয় পক্ষ জানে এটি হবে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

ইউক্রেনের প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ হবে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী
ইউক্রেনে দখলকৃত অঞ্চলে রুশ ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

শত কোটি ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম পশ্চিমাদের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন। অপর দিকে, রাশিয়া ২ লাখের বেশি নতুন সেনা সংগ্রহ করেছে, ইউক্রেনীয়দের ঠেকাতে পরিখা খনন করেছে এবং গুলিবর্ষণের জন্য অবস্থান তৈরি করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রুশ সেনারা লাখো স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে। এগুলোর কিছু স্থানান্তর করা হয়েছে মোবাইল লঞ্চার থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত ইউক্রেনীয় একটি ইউনিট এই মাসের শুরুতে একটি মাইনক্ষেত্রে হাজির হয়। তাদের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান। অপর ইউনিটগুলো রুশ হেলিকপ্টার থেকে হামলার শিকার হয়েছে। আকাশ ও ভূমি থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে তাদের লক্ষ্য করে।

আক্রমণে ব্যর্থতার কারণে সম্প্রতি ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা কৌশল পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ স্থগিত করেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি সামরিক যান পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

আকাশে শ্রেষ্ঠত্বের ঘাটতি থাকায় ইউক্রেন চেয়েছিল সরবরাহ ও কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়ে রুশদের সক্ষমতা হ্রাস করতে। এসব হামলায় তারা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষ করে ব্রিটেনের সরবরাহ করা স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপাল্লার হিমার্স রকেট লঞ্চার কাজে লাগানো হয়।

ইউক্রেনের প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ হবে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর পৃথক অ্যাসল্ট ব্রিগেডের একজন ইউক্রেনীয় সেনা ২৩ এপ্রিল বাখমুতে একটি হাউইটজার ডি30 দিয়ে রুশ সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছেন। ছবি রয়টার্স

ইউক্রেন গত বছর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন পুনরুদ্ধার করে। তখন তারা পরিকল্পিতভাবে রাশিয়ার সাপ্লাই লাইন ও রুশ সেনাদের সহায়তার পথ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। খেরসন শহর ছিল রাশিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ দুটি নদীর প্রবাস রুশ সেনাদের সেখানে একভাবে অবরুদ্ধ করেছিল। এরপরও ইউক্রেনীয় অবরোধ সফল হতে কয়েক মাস লেগেছিল। বর্তমান পাল্টা আক্রমণে খেরসনের মতো লক্ষ্যবস্তু নেই ইউক্রেনের সামনে। যা কিয়েভের জন্য জটিলতা বাড়িয়েছে।

স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক ফিলিপস ও’ব্রায়েন বলছেন,

- বিজ্ঞাপন -

ইউক্রেনীয় আক্রমণকারীরা রুশ প্রতিরক্ষা ভেঙে দিতে সফল হতে পারবে কেবল যদি তারা শুরুতেই তাদের গুঁড়িয়ে দেয়। কারণ তাদের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা রাশিয়ার তুলনায় কম, ফলে বিমান হামলা চালিয়ে নিজেদের পথ করে নিতে পারছে না তারা। পারছে না সম্মুখভাগে থাকা নিজেদের সাঁজোয়া যানকে সুরক্ষিত করতে। এটি একটি নির্মম ধাপ।

সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য ইউক্রেন রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার পরীক্ষা নিচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কিয়েভের সেনারা বিস্তৃত রণক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার বেলেগোরোদ থেকে ইউক্রেনের উত্তরের সীমান্ত টকমাকে পর্যন্ত এসব হামলা হয়েছে। ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন, রবিবার তারা রাশিয়ার একটি বড় অস্ত্রাগার ধ্বংস করেছে। এটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে অবস্থিত, যা ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করেছিল।

বাখমুতেও রুশ সেনাদের ওপর হামলা করেছে ইউক্রেন। শহরটি দখলে ১০ মাস লড়াই করেছে রাশিয়া। কয়েক সপ্তাহ আগে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয় রুশ সেনারা। কিন্তু এরপরই শহরটিতে থেকে যাওয়া ইউক্রেনীয় সেনারা রুশদের ওপর হামলা শুরু করেছে। শহরটি ধরে রাখতে মস্কো আরও সেনা মোতায়েন করেছে। অন্যথায় তাদের প্রতিরক্ষা রেখা সুরক্ষায় নিয়োজিত করা হত। ন্যাটোর প্রাক্কলন অনুসারে, বাখমুতের লড়াইয়ে রাশিয়ার সেনা হতাহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ।

ন্যাটো জোটের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, বাখমুতে রুশ সেনারা বিধ্বস্ত না হলেও খুব বেশি ক্লান্ত।

ইউক্রেনের প্রতিক্ষীত পাল্টা আক্রমণ হবে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী
ইউক্রেনীয় সৈনিকরা যুদ্ধের পর তাদের অবস্থানে ফিরে এসেছেন ক্লান্ত অবস্থায়।১১ মে। ছবি রেডিও ফ্রি ইউরোপ

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, অন্যান্য স্থানে কমান্ডোসহ ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ প্রতিরক্ষার দুর্বলতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এমনকি যেসব হামলায় রুশ প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে পারছে না সেগুলো ইউক্রেনীয় কৌশলবিদদের রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করার সুযোগ দেবে। রুশ সেনাদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও কোথা থেকে তারা হামলা মোকাবিলা করছে, তা থেকে ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা নতুন লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে পারবে। যাতে হামলা চালানো হবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। রেডিও যোগাযোগ থেকেও ইউক্রেনীয়রা রুশ লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত এবং রণক্ষেত্রের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

ন্যাটোর সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, শত্রুদের মাইন কোথায় পুঁতে রাখা আছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফল নির্ভর করবে কোন পক্ষ ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছে তার ওপর বলে মনে করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিডের সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক কানসিয়ান। তিনি এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কুরস্কের লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন। রুশ শহরটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের কাছাকাছি। আক্রমণকারী জার্মান বাহিনীর অপেক্ষায় ছিল প্রতিরক্ষায় থাকা সোভিয়েত বাহিনী। উভয় পক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু জার্মানি যখন আক্রমণ শুরু করে তখন তারা বুঝতে পারে তারা অনেক দেরি করে ফেলেছে। সোভিয়েত দ্রুততার সঙ্গে নিজের শক্তি বাড়িয়েছে। লড়াইটি জিতে যায় সোভিয়েতরা। এটি ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম ট্যাংক যুদ্ধ।

তিনি আরও বলেছেন, একইভাবে মস্কো ও কিয়েভ গত কয়েক মাস ধরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। ফলে এই লড়াই হবে তাদের প্রস্তুতির পরীক্ষা। কে কত দ্রুততার সঙ্গে শক্তি অর্জন করতে পেরেছে। তবে সুবিধায় থাকবে কিয়েভ।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!