ইউক্রেইনে বাঁধ ধসে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২
ইউক্রেইনের খেরসন অঞ্চলের রাশিয়ার অধিকৃত অংশে নিপ্রো নদীর কাখোভকা বাঁধ ধসের ফলে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।
৬ জুন বাঁধটি ধসে পড়ার পর থেকে দক্ষিণ ইউক্রেইনজুড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে, এতে ঘরবাড়ির পাশাপাশি কৃষিখামার ধ্বংস হয়েছে আর সাগরে গিয়ে পড়া নোংরা পানির কারণে ওই অঞ্চলের সৈকতগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খেরসন অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের এলাকাগুলোতে ১৭ জনের মৃত্যু ও ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এ পর্যন্ত উভয় পাশ থেকে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রোববার জাতিসংঘ জানিয়েছে, বন্যায় দুর্যোগে পড়া বাসিন্দাদের জন্য দেওয়া তাদের সাহায্যের প্রস্তাব মস্কো প্রত্যাখ্যান করেছে; রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে সেই অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউক্রেইনের জন্য জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংক্রান্ত সমন্বয়ক ডেনিশ ব্রাউন বলেছেন, “যাদের প্রয়োজন তাদের ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করা যায় না।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার প্রথমদিক থেকেই কাখোভকা বাঁধটি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের এ বাঁধটি ধ্বংসের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেইন।
ইউক্রেইনের কৌঁসুলিদের তদন্তে সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল বলেছে, তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন ধারণা পাওয়া গেছে যে রাশিয়ার পাতা বিস্ফোরকের কারণেই ‘খুব সম্ভবত’ বাঁধটি ধ্বংস হয়েছে।
অপরদিকে জলবিদ্যুৎ বাঁধে নাশকতার পেছনে কিইভকে অভিযুক্ত করেছে ক্রেমলিন। ওই বাঁধের পেছনে বিশাল আকৃতির একটি জলাধার ছিল। বাঁধ উড়িয়ে দিয়ে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের পানির ওই গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিচ্ছিন্ন করে ফেলার জন্য কিইভকেই দুষেছে মস্কো।
বন্দরনগরী ওদেসার কর্তৃপক্ষ বাঁধ ধসের কারণে নেমে আসা নোংরা পানির কারণে কৃষ্ণ সাগরের জনপ্রিয় সৈকতগুলো বন্ধ করে দিয়ে সেখানে সাঁতার কাটা নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ওই এলাকার বাসিন্দাদের অজ্ঞাত উৎস থেকে আহরণ করা মাছ ও সিফুড খেতে নিষেধ করেছে।
ওদেসার প্রশাসন টেলিগ্রাম অ্যাপে বলেছে, “পানির মানের উল্লেখযোগ্য অবনতি হওয়ায় ওদেসার সৈকতগুলোকে সাঁতার কাটার জন্য অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিকার বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।”
ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে পানি পরীক্ষা করে তাতে বিপজ্জনক মাত্রায় সালমোনেলা ও অন্যান্য ‘সংক্রামক জীবাণুর’ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কলেরা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
নিপ্রো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি হ্রাস পেলেও পানিবাহিত টন টন আবর্জনা কৃষ্ণ সাগরে গিয়ে পড়ে ওদেসা উপকূলকে দুষিত করে তুলেছে, যাকে ‘ইকোসাইড’ বলে উল্লেখ করেছে ইউক্রেইন।