বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক নিহত

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক নিহত

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে এক ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। নিহত ব্যক্তিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘গরু পাচারকারী’ বলে অভিহিত করেছে – একথা জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রাত্রে শৌচ করার জন্য ঘরের বাইরে বের হতেই বিএসএফ তাকে গুলি করে এবং সেখান থেকে দেহ টেনে নিয়ে সীমান্তের পাশে ফেলে আসে।

ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার জেলায় শুক্রবার রাতে এবং তার নাম গৌতম বর্মণ। কোচবিহার জেলার কুচলিবাড়ি থানায় যে লিখিত ঘটনাক্রম জমা দিয়েছে বিএসএফ, সেটি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন জেলার পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট সুমিত কুমার।

লিখিত বয়ানে বিএসএফ বলেছে , “অর্জুন সীমান্ত চৌকিতে প্রহরারত বিএসএফ সদস্যরা রাত পৌনে একটার দিকে কিছু দুষ্কৃতিকারীর চলাচল লক্ষ্য করে, তাদের সঙ্গে গরু ছিল, যেগুলি ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। বিএসএফ সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করে, কিন্তু দুষ্কৃতিরা ধারালো এবং ভোঁতা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে, তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।“

- বিজ্ঞাপন -

কুচলিবাড়ি থানায় জমা দেওয়া লিখিত বয়ান উদ্ধৃত করে কোচবিচারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, “বিএসএফ সদস্যরা পিএজি থেকে এক রাউণ্ড গুলি চালায়। পরে তল্লাশির সময়ে কাঁটাতারের বেড়া বিহীন একটি এলাকায় মাথায় গুলি সহ এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ বিএসএফ সদস্যরা দেখতে পান। তার পাশে দুটি গরু, একটি দা এবং কিছু বাঁশের লাঠি পাওয়া গেছে। বিএসএফ তাদের নিজস্ব পুরুষ নার্সকে ডেকে পাঠায়, এবং তিনি দেহটি পরীক্ষা করে জানান যে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।

পাম্প অ্যাকশন গান, যেটি সাধারণ ভাবে মারণাস্ত্র নয়, কিন্তু খুব কম দূরত্ব থেকে ওই বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলিও মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে বিএসএফ দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে।

পুলিশ জানিয়েছে, পরে ওই ব্যক্তিকে ফুলকাডাবরি গ্রামের বাসিন্দা গৌতম বর্মন বলে শনাক্ত করেন তার আত্মীয়রা।

Untitled 2 23 বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক নিহত
কোচবিহারের সীমান্তেই বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানি খাতুন। ফাইল ছবি

পরিবারের বয়ান আলাদা

নিহতের এক ভাই শ্যামল রায় জানাচ্ছেন যে গৌতম বর্মন কোনভাবেই গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত নন, তিনি কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন এবং সম্প্রতি বাড়ি এসেছিলেন।

“বৃহস্পতিবার আমার মাসতুতো ভাই আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তখন আমাদের রাতের খাওয়ার সময়। তাই মা তাকে খেয়ে যেতে বলেছিল। গৌতম তাতে রাজী হয়, তবে বলে সে একটু টয়লেট থেকে আসছে। এই বলে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল, তার পরেই আমরা গুলির আওয়াজ পাই। তখন আনুমানিক দশটা হবে রাত,” জানাচ্ছিলে শ্যামল রায়।

- বিজ্ঞাপন -

তার কথায়, “আমরা সবাই বাড়ির এত কাছে গুলির আওয়াজ পেয়ে ভয় পেয়ে যাই। কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আমরা লাইট জ্বালিয়ে আশপাশে কিছুই দেখতে পাই নি। এদিকে ভাইও বাড়ি ফেরে নি। শুক্রবার ভোরবেলায় বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে একেবারে সীমান্তে ভাইয়ের দেহ খুঁজে পাই। এদিকে আমাদের বাড়ির কাছে গুলির ফাঁকা খোল, রক্ত পড়ে ছিল।“

মি. শ্যামল রায় বলছিলেন তাদের বাড়ির সামনে ভাইকে গুলি করে মেরে দেহ টেনে নিয়ে গিয়ে সীমান্তে ফেলে দিয়ে তাকে গরু পাচারকারী বলে চালাচ্ছে বিএসএফ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে ফুলকাডাবরি গ্রামে গিয়েছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত ভার্মা। তিনি জানিয়েছেন বিএসএফের বয়ান তাদের কাছে জমা পড়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদের বয়ান থানায় লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে আর দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -
Untitled 3 17 বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক নিহত
ফুলকাডাবরি গ্রামে নিহত গৌতম বর্মনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবি সংগৃহীত

দুই বছরে দশ ভারতীয় নিহত

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কোচবিহার জেলার অংশে এ নিয়ে গত দুবছরে দশ জন ভারতীয় নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারালেন।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিএসএফ বলে এসেছে যে নিহতরা গরু পাচারের চেষ্টা করছিলেন, তাদের সেই কাজে বাধা দেওয়ায় পাচারকারীরা বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণ করেন, তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়।

সীমান্ত হত্যা নিয়ে সরব মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের প্রধান কিরীটী রায় বলছিলেন, “যদি ধরেও নিই যে এই গৌতম বর্মন বা তার মতো আরও যেসব ভারতীয় নাগরিক বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন, তারা গরু পাচারকারী, কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের আটক না করে গুলি কেন চালাচ্ছে? কে পাচারের কাজে দোষী বা নির্দোষ, সেই বিচার করার অধিকার কে দিয়েছে বিএসএফকে? সন্দেহভাজন পাচারকারীকে তো গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য পাঠানোর কথা।”

“আরও অনেক ক্ষেত্রে আমরা যেমন দেখি যে মাথায় গুলির চিহ্ন, এখানেও সেই একই ঘটনা। ভারতীয় আইন অনুযায়ী নিরাপত্তাবাহিনীকে নিতান্তই গুলি চালাতে হলে পায়ে গুলি করার নিয়ম, কিন্তু মাথায় গুলি করার অর্থ হত্যা করার জন্যই গুলি করা হচ্ছে,” বলছিলেন মি. রায়।

তিনি আরও বলছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের যে অংশ আছে, সেখানে গুলি চালনা কমে এলেও কোচবিহার জেলাতে সেই মৃত্যু কিছুতেই থামছে না।

গৌতম বর্মনের আগে এই জেলায় গত দুবছরে অন্তত নয় জন ভারতীয় নাগরিক বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন।

Untitled 4 16 বিএসএফ এর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক নিহত
কাঁটাতারের বেড়ার অপর দিকে যে ভারতীয় কৃষি জমি আছে, সেখানে কী চাষ করা যাবে, তাও ঠিক করে দেয় বিএসএফ। ছবি সংগৃহীত

মাছ ধরতে গিয়ে গুলি

কোচবিহারের গিতালদহ অঞ্চলের বাসিন্দা বিলকিস বিবির স্বামী মোফাজ্জল হোসেন বাড়ির কাছে বিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন প্রতিদিনের মতোই। সেটা ছিল ২০২২ সালের ২৯ জুন।

সেই রাতে তিনি গুলির শব্দ পেয়েছিলেন, কিন্তু কল্পনাও করেন নি যে ওই গুলিটা তার স্বামীর মাথা তাক করে চালানো হয়েছিল।

“দুপুরের দিকে আমার স্বামীর দেহ ভাসতে দেখা যায় ওই বিলের জলেই। তার মাথায় গুলি লেগেছিল। তখনই আমার খেয়াল হয় যে রাতে আমি একটা গুলির আওয়াজ পেয়েছিলাম। কিন্তু দু:স্বপ্নেও ভাবি নি সেটা আমার স্বামীর মাথায় গুলি করার আওয়াজ,” বলছিলেন বিলকিস বিবি।

মি. হোসেনের বিরুদ্ধেও বিএসএফের অভিযোগ ছিল যে তিনি আসলে একজন পাচারকারী।

কিরীটী রায় বলছেন কোনও মৃত্যুর ক্ষেত্রেই সঠিক তদন্ত হয় না, ক্ষতিপূরণ পান না নিহতের পরিবার। শুধু যে ভারতীয় নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসছে, তা নয়।

কোচবিহার জেলার সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন বিএসএফের অত্যাচার তাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি তারা কী চাষ করতে পারবে কাঁটাতারের বেড়ার অন্য দিকে থাকা চাষের জমিতে, সেটাও বিএসএফই ঠিক করে দেয়।

সীমান্তের বাসিন্দারা অনেকেই এখন চাইছেন কাঁটাতারের বেড়ার অপর দিকে থাকা তাদের জমি সরকার নিয়ে নিক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে, তাহলে তারা নিত্য অত্যাচারের হাত থেকে অন্তত বাঁচতে পারবেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!