রুশ হামলায় আবার লণ্ডভণ্ড ওডেসা, নিহত ৩
রাশিয়ার সমুদ্র থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের বন্দর শহর ওডেসাতে আঘাত হেনেছে। মারা গেছে তিনজন এবং আহতের সংখ্যা ১৩। হতাহতরা একটা দোকানের গুদামঘরের ভেতর ছিল, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আগুন ধরে যায়।
সেখান থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের কাজ করছে।
রুশ মিসাইল ওডেসা শহরের কেন্দ্রে একটি ব্যবসা কেন্দ্র, একটি কলেজ, কিছু দোকানপাট, রেস্তোরাঁ এবং কিছু আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে বলে ইউক্রেন জানাচ্ছে। এই হামলায় আহত হয়েছে ছয়জন।
আরেকটি পৃথক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পূর্ব দোনেৎস্ক এলাকার ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অংশে তিনজন বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।
ইউক্রেন বলছে রাতভর ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে, তবে বেশিরভাগই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ওডেসা সামরিক প্রশাসনের একজন মুখপাত্র সেরহি ব্রাটচুক টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে একটি ভিডিও এবং কিছু ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বহুতল ভবনের দেওয়াল ধসে গুঁড়িয়ে গেছে এবং জানলার কাঁচ উড়ে গেছে। এবং একটি গুদামে লাগা আগুন আয়ত্তে আনতে হিমশিম খাচ্ছে দমকলকর্মীরা।
যেভাবে আক্রমণ হল
দক্ষিণাঞ্চলীয় অপারেশন কমান্ডের বরাত দিয়ে কিয়েভে একটি টিভির খবরে বলা হয়েছে কৃষ্ণ সাগরে একটি জাহাজ থেকে ওডেসা লক্ষ্য করে চারটি ক্যালিবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
ওয়ান প্লাস ওয়ান নামে এই টিভি চ্যানেল জানাচ্ছে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি দোকানের গুদামের ওপর গিয়ে পড়লে সেখানে আগুন ধরে যায়। তারা জানায় গুদামের তিনজন কর্মী নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছে।
সেনা কমান্ড থেকে জানানো হয়েছে আরও মানুষ গুদামের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে।
সেনা কমান্ড থেকে আরও বলা হয়েছে রাতের বেলা ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহর কেন্দ্রে একটি ব্যবসা কেন্দ্র, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি আবাসিক ভবন, এবং কয়েকটি কাফে এবং রেস্তোরাঁ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওডেসা বন্দর কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য এই বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। যুদ্ধ চলাকালীন এই বন্দরের ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে।
ওডেসার ওপর এই হামলা হল এমন সময় যখন ইউক্রেনও এলাকা পুনর্দখলের জন্য পাল্টা লড়াই চালাচ্ছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন গত তিন দিনে তারা এক বর্গ মাইল এলাকা পুনর্দখল করেছেন।
রুশ প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া ওডেসার ওপর তাদের সর্বসাম্প্রতিক হামলা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার দাবি করেছেন ইউক্রেনের পাল্টা হামলা ব্যর্থ হয়েছে এবং ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে বড়ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকের সময় মি. পুতিন বলেছেন কিয়েভের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ “মারাত্মক” পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রাশিয়ার তুলনায় দশ গুণ বেশি।
তবে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা ব্যর্থ হয়েছে এমন কথা মানতে রাজি নন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন: “আমাদের সৈন্যরা এগোচ্ছে”।
একই মন্তব্য করেছেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনিও। টেলিগ্রাম অ্যাপে তিনি লিখেছেন: “কিছু সাফল্য এসেছে, আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি- অগ্রগতি হচ্ছে”।
দুপক্ষই প্রতিদিন শত্রু পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দিচ্ছে, কিন্তু নিরপেক্ষভাবে এসব তথ্য যাচাই করা অসম্ভব।
মি. পুতিন যুদ্ধ সংবাদদাতাদের সঙ্গে তার বৈঠকে যেসব বিবৃতি দিয়েছেন তাতে মূলত রাশিয়ার জয়গান থাকলেও তিনি স্বীকার করেছেন যে ইউক্রেন সম্প্রতি তাদের সীমান্তের ভেতর থেকে রাশিয়ার ওপর যে হামলা চালিয়েছে তা রাশিয়ার আগে থেকে ধরতে পারা উচিত ছিল।
তিনি বলেন ইউক্রেনের ভূখণ্ডে এমন একটা ব্যূহ গড়ে তোলার কথা তিনি বিবেচনা করছেন যে দূরত্ব থেকে ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়ায় ঢোকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর পরেও “রাশিয়ার হাতে যথেষ্ট সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার সামরিক সরঞ্জাম, যোগাযোগের যন্ত্রপাতি, বিমান এবং ড্রোন নেই”।
বিবিসির ইউরোপ বিষয়ক ডিজিটাল সম্পাদক পল কারবি বলছেন এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ওডেসা রাশিয়ানদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু এবং মাঝেমাঝেই ওডেসার ওপর রুশরা ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলছেন সর্বসাম্প্রতিক এই বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা স্পষ্টতই চালানো হয়েছে আরও পূব দিকে ইউক্রেনের সামরিক হামলার জবাবে। রাশিয়া প্রমাণ করতে চাইছে যে ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলোতে আঘাত হানার সক্ষমতা তাদের এখনও রয়েছে।
এর আগে পর্যন্ত রাশিয়া শুধু ওডেসা বন্দরকেই টার্গেট করেছে।
কিন্তু গত রাতের হামলায় তারা আবাসিক এলাকাতেও হামলা চালিয়েছে। তবে ঐতিহাসিক শহরটির একেবারে কেন্দ্রস্থল বড়ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে বলে পল কারবি জানাচ্ছেন।
গত বছর সেখানে দুটি শিল্পকলা যাদুঘরে আঘাত হানা হয়েছে। কিন্তু শহরের অপেরা এবং ব্যালে থিয়েটার হল অক্ষত রয়েছে এবং সেখানে পুরো গ্রীষ্ম মরশুমে নানা ধরনের অনুষ্ঠান চলছে। এই শহরে বাস করেন মিশ্র জাতি বর্ণের মানুষ।