রাশিয়ার নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন কে উড়িয়েছে ?
রাশিয়া থেকে জার্মানিতে যাওয়া রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইন নর্ডস্ট্রিম-১ ও নর্ডস্ট্রিম-২-এ গত বছর বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই লাইনে বিস্ফোরণের কারণে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি শঙ্কায় পড়ে যায়। এ ঘটনার পর রাশিয়া এবং ইউক্রেন একে-অপরকে দোষারোপ করে।
তবে বিস্ফোরণের সঙ্গে কে জড়িত তা নিয়ে নতুন একটি সূত্র পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল শনিবার (১০ জুন) জানিয়েছে, পোল্যান্ডকে ব্যবহার করে রাশিয়ার নর্ডস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আর এ তথ্যটি এখন যাচাই-বাছাই করছে জার্মানি।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বাল্টিক সাগরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সাগরের তলদেশ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গেছে নর্ডস্ট্রিম-১ ও নর্ডস্ট্রিম-২ নামের দুটি গ্যাস সরবরাহকারী লাইন। এই লাইনের মাধ্যমে জার্মানিসহ পুরো ইউরোপে যেত রাশিয়ার গ্যাস।
বিস্ফোরণের পরপরই মস্কো জানায়, পশ্চিমাদের সহায়তায় ইউক্রেনীয় নাশকতাকারীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
নতুন সূত্রের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা এখন পোল্যান্ডভিত্তিক আন্দ্রোমেদা নামের একটি ৫০ ফুটের বিশাল জাহাজ (ইয়ট) নিয়ে তদন্ত করছেন। এই জাহাজটিই পাইপলাইন বিস্ফোরণে জড়িত ছিল বলে ধারণা তাদের।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দ্রোমেদা জাহাজ ব্যবহার করে নাশকতাকারীরা নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে গভীর সমুদ্রে বিস্ফোরক স্থাপন করে। এর আগে এটি পোল্যান্ডে গিয়েছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ওই জাহাজটিতে পাওয়া একটি ডিএনএ সেম্পল এখন অন্তত একজন ইউক্রেনীয় সেনার সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছে জার্মানি।’
আন্দ্রোমেদা জাহাজের রেডিও এবং নেভিগেশনের যন্ত্রাংশ, স্যাটেলাইট, মোবাইল ফোন এবং জি-মেইলের অ্যাকাউন্টও তদন্ত করা হয়েছে।
‘আর তদন্ত শেষে দেখা গেছে, বিস্ফোরণ স্থানের প্রত্যেকটি অংশে গিয়েছিল জাহাজটি। এতে তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে, গত বছরের বিস্ফোরণে আন্দ্রেোমেদা জাহাজটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, পশ্চিমা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে ছোট একটি সূত্র পাওয়ার পরই তদন্তকারীরা জাহাজটির জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন।
গত বছর যখন রাশিয়ার পাইপলাইনে বিস্ফোরণ হয়— তখন পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা দ্রুত গ্যাসের বদলে অন্যান্য জ্বালানির সন্ধান শুরু করে।
এদিকে এ সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ইউরোপের একটি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে মার্কিন সরকার জানতে পারে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ডাইভার ব্যবহার করে পাইপলাইনে হামলার পরিকল্পনা করেছে। এই সংস্থাটি বিস্ফোরণের তিন মাস আগে বিষয়টি সম্পর্কে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফকে সরাসরি অবহিত করে।
তবে গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পাইপলাইনে হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি হলাম প্রেসিডেন্ট আর আমি সবকিছু বুঝে নির্দেশ দেই। ইউক্রেনের দ্বারা এমন কিছুই হয়নি। আমি এভাবে কিছুই করব না।’
গত মার্চে জার্মানির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, বিস্ফোরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি জাহাজ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। যেটি পোল্যান্ডভিত্তিক একটি কোম্পানি। এ কোম্পানিটি আবার ইউক্রেনের মালিকানাধীন।
সূত্র: আল জাজিরা