ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে তুমুল লড়াই
ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার রণক্ষেত্রে এই লড়াই হয় বলে দাবি করছে মস্কো। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ নিয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে কিয়েভ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রণক্ষেত্র থেকে স্বতন্ত্রভাবে খবর সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ফলে ইউক্রেনের আক্রমণের তীব্রতা বা মাত্রা কেমন বা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে কয়েক হাজার প্রশিক্ষিত সেনা অংশগ্রহণ করার কথা। যাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে পশ্চিমারা। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া রাশিয়া বলছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করে যাচ্ছে। কিয়েভ এখনও বলেনি তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছে।
রুশপন্থি সামরিক ব্লগাররা শুক্রবার জাপোরিজ্জিয়া রণক্ষেত্রে তুমুল লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ওরিখিভ শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী একটি স্থল সংযোগের মাঝামাঝিতে এই লড়াই হয়। এই স্থল সংযোগকে ইউক্রেনের একটি সম্ভাব্য প্রধান নিশানা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
আক্রমণের সময় ইউক্রেন সাধারণ সাংবাদিকদের রণক্ষেত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি দেয় না।
পাল্টা আক্রমণের শুরুটা ডিনিপ্রো নদীর কাভোভকা বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয়ের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। বাঁধের পানিতে প্লাবিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। কৃষি ও প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার কিয়েভ বলেছে, তারা একটি ফোন কল থেকে জানতে পেরেছে বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রণে থাকা রুশ বাহিনী। রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেন এই নাশকতা চালিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা এখনও প্রমাণ সংগ্রহ করছে। তবে এমন বিপর্যয় ডেকে আনার মতো ইউক্রেনের কোনও কারণ নেই। বিশেষ করে যখন তাদের বাহিনী আক্রমণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
রণক্ষেত্রের সর্বশেষ বুলেটিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টা ইউক্রেনের ২১টি ট্যাংক ধ্বংস করেছে। স্বতন্ত্রভাবে রয়টার্সের পক্ষে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বাখমুত শহরের পূর্বাংশে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন। গত মাসে প্রায় এক বছর ধরে লড়াইয়ের পর শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ সেনারা। এমন দাবি করলেও কিয়েভ দক্ষিণ রণক্ষেত্র নিয়ে কার্যত কিছু বলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এই রণক্ষেত্রেই ইউক্রেনের মনোযোগ রয়েছে সর্বাধিক। কারণ, তারা রুশ সেনাদের উপকূলের দিকে ঠেলে দিতে যায় এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বাখমুতে সফলতার জন্য ইউক্রেনের সেনাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ইউক্রেনীয় উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তবে তিনি বলেছেন ইউক্রেনীয় সেনারা মূলত রুশ আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বিষয়ে তিনি শুধু বলেছেন ভেলিকা নভোসিল্কা অঞ্চলে লড়াই চলছে এবং রুশ সেনারা ওরিখিভ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা জোরদার করছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে ইউক্রেন রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ চালিয়ে আসছে। বিপরীতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনীয় শহরে হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রাশিয়ার ছোড়া ছয়টির মধ্যে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় একজন নিহত ও অপর তিন জন আহত হয়েছে। চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।