ইউক্রেইনের নোভা কাখোভকার বিশাল বাঁধ ধ্বংস হয়ে খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক গ্রাম, ফসলের ক্ষেত ও রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ার দুই দিন পরও প্লাবিত বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে কয়েকশ লোককে উদ্ধার করা হয়েছে।
অঞ্চলটির ইউক্রেইনীয় গভর্নরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ড্রোন ভিডিওতে বন্যা দুর্গত অনেক এলাকায় বাড়িঘরের ছাদ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না; বন্যায় খেরসনের প্রায় ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা তলিয়ে গেছে।
নোভা কাখোভকার বাঁধটি এমন এক সময়ে ধসে পড়ল, যখন ইউক্রেইন পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই পাল্টা আক্রমণকে ইউক্রেইন যুদ্ধের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ নামে সেনা পাঠালে যুদ্ধ শুরু হয়। এটি এরই মধ্যে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, অগণিত মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, অসংখ্য শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেইনের বহুল প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, মার্কিন গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এমন খবর অস্বীকার করেছে কিইভ।
কিইভের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যুদ্ধক্ষেত্রের কাছে থাকা এক সৈন্যের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এনবিসি নিউজ জানায়, ইউক্রেইন তাদের বহু প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর চারজনের বরাত দিয়ে একই খবর দেয় ওয়াশিংটন পোস্টও।
এসব সংবাদের ব্যাপারে কিইভের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হলে রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে (পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে) এই ধরনের কোনো তথ্য নেই।”
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেইন সংক্রান্ত দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ে জানায়, যুদ্ধক্ষেত্রের একাধিক সেক্টরে তুমুল লড়াই চলছে, বেশিরভাগ এলাকায় ‘কিইভ এগিয়ে আছে’।
ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, খেরসনে বন্যা রুশ সেনাদেরকে ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য করেছে, যে কারণে রাশিয়ার ছোড়া গোলার সংখ্যা ‘কার্যত অর্ধেকে’ পরিণত হয়েছে।
রাশিয়ার তাস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, কীভাবে ইউক্রেইনের একটি বড় আক্রমণ তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবহিত করেছেন রুশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কমান্ডার।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বৃহস্পতিবার বলেন, জাপোরিজিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনীয় সেনারা রাতভর হামলা চালিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই আক্রমণে উল্টো ইউক্রেইনের তুমুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রাশিয়া ও ইউক্রেইন উভয়েই সোভিয়েত আমলে নির্মিত বিশাল কাখোভকা জলবিদ্যুৎ বাঁধ ধ্বংসের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
এই ঘটনায় যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেখানে অপরপক্ষের গোলাবর্ষণের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার কিইভ আর মস্কো একে অপরকে দোষারোপ করেছে।
ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খেরসনে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সময় রাশিয়ার গোলায় অন্তত ৯ বাসিন্দা আহত হয়েছে।
দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তর প্রথমে গোলায় একজন নিহত হয়েছে বলে জানালেও পরে জানায়, নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
একই ধরনের অভিযোগ করেছে ক্রেমলিনও। ইউক্রেইনীয় সেনারা রাশিয়ার উদ্ধারকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে বলে অভিযোগ তাদের।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বন্যা কবলিতদের জন্য ‘দ্রুত ও পর্যাপ্ত’ আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি হঠাৎ সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে খেরসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
মানবিক ত্রাণ সহযোগিতা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের দপ্তর বলেছে, দুর্গত এলাকায় খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও জেরিক্যান পাঠিয়েছে দাতা সংস্থাগুলো।
“এখন খাবার পানিই সবচেয়ে দরকারি জিনিস,” বলেছে তারা।
ক্রেমলিন বলেছে, বন্যা দুর্গত এলাকা সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা পুতিনের নেই, তবে তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকা বাঁধ ধ্বংসে ইউক্রেইনকে দায় দিয়ে বলেছেন, পশ্চিমা মিত্রদের পরামর্শেই তারা এমন কাজ করেছে।
অন্যদিকে ইউক্রেইন বলছে, রাশিয়া কয়েক মাস আগেই ওই বাঁধে মাইন পেতে রেখেছিল এবং কিইভবাহিনীর নিপ্রো নদী অতিক্রম করা ঠেকাতে তারাই বাঁধ উড়িয়ে দিতে পারে।
বন্যায় এখন পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি।
নোভা কাখোভকার রুশপন্থি মেয়র বৃহস্পতিবার বলেছেন, অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জেনেছেন তিনি, তবে এই সংখ্যা অবশ্যই আরও অনেক বেশি হবে।
খেরসনের ইউক্রেইনীয় গভর্নর ওলেকসান্দর প্রোকুদিন বলেছেন, বন্যা দুর্গত এলাকার ৬৮ শতাংশই পড়েছে রাশিয়ার দখলে থাকা নিপ্রো নদীর বাম তীরের অংশে।