যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে পাড়ি জমালেন মেসি
লিওনেল মেসির বার্সেলোনায় ‘ফিরতে চাওয়া’, সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিকের প্রস্তাব-গত কদিনে ডালপালা মেলা এইসব শব্দ গুঞ্জন মিথ্যে হয়ে গেল। ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাঠ চুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে পাড়ি জমালেন আর্জেন্টাইন তারকা।
বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে স্পেনের দুটি ক্রীড়া পত্রিকা মুন্দো দেপোর্তিভো ও স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি নিজেই নিশ্চিত করেন তার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি।
“আমি মায়ামিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনও চুক্তির সব কাজ সারতে পারিনি।”
“এখনও কিছু বিষয় বাকি আছে। তবে আমরা এই লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মেসির ভবিষ্যৎ ঠিকানা ঘিরে যত আলোচনা চলছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উড়ো খবর ছিল তার সৌদি লিগে যাওয়া নিয়ে। গত কয়েক দিনে আবার তার বার্সেলোনায় যাওয়ার সম্ভাবনার খবরও বেশ জোরাল হয়।
এইতো গত সোমবারই যেমন তার বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি বার্সেলোনায় গিয়ে কাতালান ক্লাবটির সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পরে হোর্হে মেসি এটাও বলেন যে, তিনি তার ছেলেকে আবার কাম্প নউয়ে দেখতে চান।
এতে অনেকেই দুইয়ে-দুইয়ে চার মিলিয়ে মেসির পুরনো ঠিকানায় ফেরার জোর সম্ভাবনা দেখতে শুরু করে। কিন্তু দুদিন পরই সব পাল্টে গেল।
নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে যোগ দিলেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন দ’র জয়ী।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, আরও এক মৌসুমের জন্য ইউরোপে থাকতে চেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু কোনো সন্তোষজনক প্রস্তাব না পাওয়ায় তার বেছে নেওয়ার জন্য ছিল ইন্টার মায়ামি ও আল হিলালের মধ্যে যে কোনো একটি।
সৌদি আরবের ফুটবলে এরই মধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমা। কিন্তু আল হিলালের সঙ্গে নাকি আর্থিক বনিবনা হয়নি মেসির।
মায়ামির তিন মালিকের একজন ইংল্যান্ডর গ্রেট ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম। এই দলকে মেসির বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। এর মধ্যে সেখানকার জীবনযাত্রার বিষয় যেমন আছে, তেমনি ফুটবলের বাইরেও বিস্তৃত বড় সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ও আছে। বিশেষ করে অ্যাডিডাস ও অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তি।
মেজর সকার লিগের দলটির বর্তমানে মাঠে সময়টা অবশ্য ভালো কাটছে না। গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচ খেলে ১১টিতেই হেরেছে দলটি। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আছে তারা।
এমনকি বর্তমানে দলটির কোনা স্থায়ী কোচও নেই। টিওয়াইসি স্পোর্টস তাদের নিজস্ব সূত্রর বরাত দিয়ে লিখেছে, আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার সাবেক কোচ জেরার্দো তাতা মার্তিনোকে নিয়োগ দেওয়ার জোর চেষ্টা করছে মায়ামি কর্তৃপক্ষ। ওই দুই দলেই অভিজ্ঞ এই কোচের সঙ্গে কাজ করা ভালো অভিজ্ঞতা আছে মেসির।
মেসির জন্য মায়ামিকে কক্ষপথে ফেরানো এবং উপরের সারিতে তুলে আনা হবে বেশ চ্যালেঞ্জের।
বার্সেলোনার আর্থিক দুরাবস্থায় দলটির সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কের ইতি টেনে ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে দুই মৌসুমে দুবারই লিগ ওয়ান জয়ের স্বাদ পান তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের আলোকে সময়টা আশানুরূপ কাটেনি তার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ঘিরে পিএসজির যে মূল চাওয়া ছিল, তাও পূরণ হয়নি। দুই মৌসুমেই তারা ইউরোপ সেরার আসর থেকে ছিটকে যায় শেষ ষোলো থেকে।
এমনকি বার্সেলোনায় দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে যে অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি তার, প্যারিসে গিয়ে দলের সমর্থকদের কাছ থেকেই দুয়ো শোনার সেই তিক্ত স্বাদ পান মেসি।
অবশ্য পিএসজিতে সময়টা অতটা ভালো না কাটলেও, মেসির পায়ের জাদু এখনও ফুরোয়নি। যার প্রমাণ মিলেছে এই তো মাস কয়েক আগেই, কাতার বিশ্বকাপে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতান তিনি। নিজে জিতে নেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
তাই সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মায়ামির যত খারাপই হোক না কেন, মেসিকে পেয়ে নিশ্চয় দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে তারা।