এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক

রানঅফ ভোটে জিতে আরো পাঁচ বছরের জন্য তুরস্কের শাসনভার হাতে পেয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান। দেশজুড়ে তার সমর্থকরা বিজয় উল্লাস করছে।

রাজধানী আঙ্কারার প্রান্তে নিজের বিশাল প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এটি পুরো সাড়ে আট কোটি তুর্কীর জয়।” ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন এরদোয়ান।

তবে এরদোয়ান যতই ঐক্যের কথা বলুন, সেটি আসলে ফাঁপাই শোনাচ্ছে। কারণ, তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিরিচতারোলুকে রীতিমত উপহাস করেছেন। কুর্দি নেতাদের জেলে ভরার কথাও বলেছেন।

রোববার রাতে প্রাথমিক ফলে জয় অনেটাই নিশ্চিত হয়ে গেলে এরদোয়ান তার ইস্তাম্বুলের বাসভবনের সামনে একটি নির্বাচনী প্রচার বাসের উপর উঠে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। সেখান থেকে তিনি কিরিচতারোলুকে নিয়ে উপহাস করে বলেন, ‘‘বাই, বাই কিরিচতারোলু।”

- বিজ্ঞাপন -

আঙ্কারায় তার সমর্থকরাও বিজয় উল্লাস করার সময় ‘বাই, বাই, কিরিচতারোলু’ বলে স্লোগান দিয়েছে। এছাড়াও করাবন্দি এক কুর্দি নেতা এবং এলজিবিটি কমিউনিটির বিরুদ্ধে সরাসরি কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক
কেমাল কিলিচদারোগলু। ছবি এপি

‘এবারের নির্বাচনকে তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে অস্বচ্ছ ও অন্যায্য নির্বাচন’ বলেছেন হেরে যাওয়া কিরিচতারোলু। তিনি নিন্দার সুরে আরও বলেন, ‘‘আমাকে হারাতে প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা একত্রিত করেছিল এবং আমি স্পষ্টভাবে এই পরাজয় স্বীকার করছি না।”

রোববারের রানঅফ নির্বচানে এরদোয়ান ৫২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন বলে অনানুষ্ঠানিক ফলে জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল এখনও ঘোষণা করা না হলেও তুরস্কের নির্বাচন কাউন্সিল বলেছে, কে জিতেছেন সেটা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই।

তবে ভোটের অনানুষ্ঠানিক ফলের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে এরদোয়ান ৫২ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেলেও কিরিচতারোলুর সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান বেশ কম। যার মানে হল, গভীর মেরুকরণে জর্জরিত তুরস্কের নির্বাচকমণ্ডলীর প্রায় অর্ধেকই এরদোয়ানের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করেনি।

গত ২০ বছর ধরে তুরস্ককে শাসন করে যাচ্ছেন এরদোয়ান। কিন্তু এবারের নির্বাচনের মতো হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ে মুখে তাকে পড়তে হয়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত এরদোয়ানের সুপরিকল্পিত নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেননি কিচিরতারোলু ।

- বিজ্ঞাপন -
এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক
ইস্তাম্বুলের রাজপথে এরদোয়ান সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: এএফপি

তবে তিনি এরদোয়ানকে রানঅফ ভোট পর্যন্ত টেনে নিতে সক্ষম হন। তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রানঅফ অর্থাৎ, দ্বিতীয় দফা ভোটে গড়িয়েছে। নির্বাচন এবং ভোটের ফলের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা-ই তুরস্কের সমাজে বিভক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে।

বিজয় ভাষণে এরদোয়ান দুই সপ্তাহ আগে হওয়া পার্লামেন্টারি ভোটে প্রধান বিরোধী দলের এমপির সংখ্যা ‍বৃদ্ধির জন্য তিরস্কার করেন। বলেন, তাদের মোট আসন সংখ্যা কমে ১২৯ হয়েছে। কারণ, তারা অনেকগুলো আসন মিত্র দলের কাছে হস্তান্তর করেছে।

ওদিকে, দেশে চলমান সব সংকটের কথা ভুলে রোববার রাতভর সড়কে বিজয় উল্লাস করেছে এরদোয়ান সমর্থকরা। সিহান নামে একজন বলেন, ‘‘কেউ ক্ষুধার্থ নেই। আমরা তার অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে খুশি। আগামী পাঁচ বছরে তিনি আরো ভালো করবেন।”

- বিজ্ঞাপন -

যদিও খোদ প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা তুরস্কের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

তুরস্কের মুদ্রা লিরার গত এক দশকের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রেকর্ড অবনমন হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।

এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক
আঙ্কারায় বিজয় উদ্‌যাপন করতে সন্তানদের নিয়ে বেরিয়েছেন দম্পতি। ছবি: এএফপি

ইস্তাম্বুলের কোচ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক সেলভা দেমিরালপ সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘যদি তারা কম সুদের হার নীতিতেই চলতে থাকে, যেমনটা এরদোয়ান ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে একমাত্র বিকল্প হল কঠোর পুঁজি নিয়ন্ত্রণ।”

শুধু তুর্কিরাই নয়, এরদোয়ানের জয়ের খবরে এবার জর্ডান থেকে আসা ফিলিস্তিনিরাও তুরস্কের পতাকা গায়ে জড়িয়ে বিজয় মিছিল করেছে।

তিউনিসিয়া থেকে বেড়াতে যাওয়া আলা নাসের বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শুধু নিজ দেশের উন্নয়নই করছেন না। বরং তিনি আরব এবং মুসলিম বিশ্বকেও সহায়তা করছেন।”

২০১৬ সালে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে বৃহৎ আকারে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল। যা তিনি সফলভাবে দমন করতে সক্ষম হন। ওই ঘটনার পর তিনি তুরস্কে প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করেন এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমাহীন করে তোলেন।

নির্বাচনে জয়ী হলে সরকার পরিচালনায় আগের নিয়ম ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিরোধীরা।

রোববার আঙ্কারায় একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে একজন ভোটার বলেছিলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে তুরস্ক থেকে যে মেধা পাচার শুরু হয়েছে তার অবসান চান তিনি। এখন থেকে হয়ত তা আরও তীব্র হবে।

এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক
সর্মথকদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা ভাষন দিচ্ছেন এরদোয়ান। ছবি এপি

এরদোয়ান বিরোধীরা এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কে যে পরিবর্তন আনার আশা করেছিলেন তা মাঠে মারা গেছে। এখন তাদের আগামী বছরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য পুনরায় একজোট হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বিরোধীদের মধ্যে সুপরিচিত ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু সমর্থকদের নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, পরিবর্তন আনতে সময় প্রয়োজন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। যা দেখে মনে হয়েছে তিনি বিরোধী দলে নতুন নেতার প্রয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সোমবার তিনি সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, গতবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী জোটের হেরে যাওয়ার মাত্র নয় মাসের মাথায় তিনি ইস্তাম্বুলে জিতেছেন এবং ২০১৯ সালে আরেক বিরোধী নেতা আঙ্কারায় জয় পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘একই কাজ করে আমরা কখনও ভিন্ন ফল আশা করতে পারি না।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!