ভারতের মণিপুরে পুলিশের গুলিতে ‘৪০ বিদ্রোহী’ নিহত
ভারতে জাতিগত সহিংসতা বিক্ষুদ্ধ মণিপুর রাজ্যের পুলিশের কমান্ডোরা বেশ কয়েকটি এলাকায় রোববার আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করেছে।
এতে অন্তত ’৪০ বিদ্রোহী’ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এম-১৬, একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং স্নাইপার বন্দুক ব্যবহার করছে। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।
“আমরা সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে খুব শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করার খবর পেয়েছি।”
“সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। মণিপুরকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসী এবং কেন্দ্রের সহায়তায় রাজ্য সরকারের মধ্যে লড়াই চলছে৷”
বিদ্রোহীরা গভীর রাতে একযোগে ইম্ফল উপত্যকা ও এর আশেপাশের পাঁচটি এলাকায় হামলা করেছে বলে কয়েকটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে এনডিটিভি।
এলাকাগুলো হল- সেকমাই, সুগনু, কুম্বি, ফায়েং এবং সেরু। অন্য আরও এলাকায় বন্দুকযুদ্ধ চলছে। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেকমাই-এ বন্দুকযুদ্ধ শেষ হয়েছে।
রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (আরআইএমএস) চিকিৎসকরা রোববার ফোনে এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন ফায়েং-এ বন্দুকযুদ্ধে আহত ১০ জনকে তারা পেয়েছেন।
বিষেনপুরের চান্দনপোকপিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক কৃষক নিহত হয়েছেন; তার মরদেহ আরআইএমএস-এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরও অনেকে হতাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গত দু’দিনে ইম্ফল উপত্যকার উপকণ্ঠে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সহিংস হামলা বেড়ে যাওয়া সুপরিকল্পিত বলেই তিনি মনে করছেন। এটি কঠোরভাবে নিন্দনীয়, বিশেষ করে যখন রাজ্যের মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই শান্তি মিশনে মণিপুরে রয়েছেন, বলেন তিনি।
২৫টির বেশি কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় ‘অপারেশন স্থগিত’ (এসওও) চুক্তি সই করেছে। এসওও নিয়মের অধীনে, বিদ্রোহীদের সরকার চিহ্নিত শিবিরে থাকা আবশ্যক এবং তালা দিয়ে রাখা অস্ত্রও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
সোমবার মণিপুরে যাবেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরের আগেই তিনি মেইতি এবং কুকি উভয় সম্প্রদায়কে শান্ত থাকা ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডেও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার দুদিনের সফরে রাজ্যটিতে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে।
মেইতেই সম্প্রদায় অনেক দিন ধরে তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়ায় দাবি জানিয়ে আসছে। উপজাতিদের জন্য মণিপুরে আইনগত বেশ কিছু সুযোগসুবিধা ও কোটা রয়েছে।
মণিপুরে এক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। লাখো মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছে। সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।