ইউক্রেনের অভিজ্ঞতায় বদলাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী, পাল্লা দিতে প্রস্তুতি ন্যাটোর

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

ইউক্রেনের অভিজ্ঞতায় বদলাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী, পাল্লা দিতে প্রস্তুতি ন্যাটোর

ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে বিপর্যয়কর ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে রাশিয়ার একটি নতুন সেনাবাহিনী। পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো পূর্বাঞ্চলে মিত্র দেশগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়ার এমন এক সেনাবাহিনীর যেটি ক্ষতবিক্ষত কিন্তু অনেক বেশি অভিজ্ঞ, হামলায় কম নির্ভুল কিন্তু অনেক বেশি নৃশংস এবং অস্ত্র কমলেও এখনও ভালো পরিমাণে মজুত রয়েছে।

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর এই পরিবর্তনের কারণে ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোকে ভাবাচ্ছে। তারাও নিজ নিজ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও মজুত বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরে এসব দেশের সেনাবাহিনী মূলত কম তীব্রতা ও দূরবর্তী বিদ্রোহ দমনের সংঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিল।

গত সপ্তাহে এস্তোনিয়াতে লেনার্ট মেরি সম্মেলনে ন্যাটো কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর যে রাশিয়ার উদ্ভব হবে তা মোকাবিলায় জোট প্রস্তুত নয়।

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্নো পেভকুর বলেছেন, আক্রমণ পূর্ব সামর্থ্যে ফিরতে রুশ সশস্ত্রবাহিনীর কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। ইউক্রেনে সরঞ্জাম ও সেনা হারালেও তারা এখনও এস্তোনিয়ার জন্য হুমকি। এর অর্থ তারা এখনও ন্যাটোর জন্য হুমকি।

- বিজ্ঞাপন -

পেভকুর ও অন্যরা জোর দিয়ে বলছেন, রাশিয়ার তাদের পদাতিক বাহিনীর বিপুল সেনা হারিয়েছে। কিন্তু মস্কোর নৌ ও আকাশবাহিনীর সক্ষমতা এখনও অনেক শক্তিশালী। তাদের রয়েছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সামর্থ্য।

uk 3 2 ইউক্রেনের অভিজ্ঞতায় বদলাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী, পাল্লা দিতে প্রস্তুতি ন্যাটোর
বাখমুটের কােছ জঙ্গলে লুকানো বুক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ইউনিট। ছবি বিবিসি

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার নৌবাহিনীর খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিমানবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে খুব বেশি না। সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ট্যাংকের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের মজুতে আছে কয়েক হাজার। হতে পারে সেগুলো খুব পুরনো। তারা এগুলোকে মেরামত বা নতুন রূপ দিতে পারে। ফলে তাদের হাজারো ট্যাংক থাকবে।

পেভকুর বলেন, এই বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে যে রাশিয়া ন্যাটো, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও ন্যাটোর পূর্ব শাখার জন্য হুমকি। আর তাই আমাদের যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুতি নিতে হবে।

আহত ভাল্লুক

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও সেনা হারানোর পরিমাণ বিপর্যয়কর। কিয়েভের দাবি, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পর থেকে তারা রাশিয়ার ২ লাখ সেনাকে নিষ্ক্রিয় করেছে। এই দাবির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানের অসামঞ্জস্য রয়েছে। হোয়াইট হাউজের হিসাবে রাশিয়ার সেনা হতাহতের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ২৩ হাজার হতে পারে। এর মধ্যে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা হতে পারে ৩৫ হাজার ৫০০ থেকে ৪৩ হাজার। এই সময়ে মস্কো ২ হাজারের মতো ট্যাংক হারিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

আক্রমণের শুরুর দিকে রুশ সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট কিয়েভ দখলের পথে অগ্রসর হয়ে করুণ পরিণতি বরণ করেছে। এদের বেশিরভাগ ফিরতে পারেনি। যারা ফিরেছে তাদেরকে পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে অথবা খারকিভে ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করতে পাঠানো হয়। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়ার সেরা সেনা ইউনিটগুলো ২০ থেকে ৪০ শতাংশ হতাহতের শিকার হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শাখার প্রধান পিটার কুইমেট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিশ্চিতভাবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর দক্ষ ইউনিট-মোটর রাইফেল গ্রুপ, তাদের বিমানবাহিনীর আক্রমণকারী ইউনিট ইউক্রেনে বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের ভালো প্রশিক্ষিত সেনা, জুনিয়র কর্মকর্তা, কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ও জেনারেল নিহত হয়েছেন। কয়েক বছরের মধ্যে এমন দক্ষতার মান অর্জন করে ফেলা সম্ভব না। কিন্তু এতে রাশিয়ার কোনও পরোয়া নাই বলে বলে মনে হচ্ছে। কারণ তারা ইউক্রেনে আক্রমণ জারি রেখেছে।

uk 2 2 ইউক্রেনের অভিজ্ঞতায় বদলাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী, পাল্লা দিতে প্রস্তুতি ন্যাটোর
বাখমুতে ইউক্রেনীয় ট্যাংক। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

এস্তোনিয়ার সেনাবাহিনীর এক কমান্ডার মেজর জেনারেল ভেইকো-ভেল্লো পাম বলেছেন, রাশিয়ার ৭৬তম এয়ার অ্যাসল্ট ডিভিশন গত কিছু দিন ধরে শুধু সেনাদের সমাহিত করার কাজ করছে। এটি তাদের জন্য ভালো কর্মকাণ্ড। পরিস্থিতি যা দেখছি তাতে গ্যারিসনগুলো ফাঁকা এবং অর্থপূর্ণ কোনও প্রশিক্ষণ নেই। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।

পেভকুর বলেন, অবশ্যই রাশিয়া ইউক্রেনে কয়েকটি ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। কিন্তু সেনা সংখ্যা রাশিয়ার জন্য কখনও সমস্যা ছিল না। তারা এক লাখ, দুই লাখ কিংবা দশ লাখ সেনা হারালেও তা গুরুত্বপূর্ণ না।

- বিজ্ঞাপন -

প্রথম এস্তোনিয়ান ব্রিগেডের কমান্ডার আন্দ্রুস মেরিলো বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ সেনা সমাবেশের আহ্বান করে রাশিয়া নিজেদের সেনা ঘাটতি অন্তত সংখ্যায় পূরণ করতে পারবে দুই মাসের মধ্যে। তাদের পুরনো অস্ত্র থাকবে। কিন্তু তা গুরুত্বপূর্ণ না। একটি ট্যাংক পুরনো হলেও তা ট্যাংক। আর তা যদি সংখ্যায় অনেক বেশি হয় তাহলে তা সমস্যা তৈরি করবে। আমার মনে হয় রুশবাহিনীর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।

কুইমেট বলছেন, রাশিয়ার এখনও অনেক অস্ত্র রয়েছে যা ইউক্রেন ও ন্যাটোকে সমস্যায় ফেলতে পারে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নির্ভুল আঘাতে সক্ষম অনেক ক্ষেপণাস্ত্র মস্কো ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমাদের পর্যালোচনায় উঠে আসছে তাদের এখনও অনেক মজুত রয়েছে। যেগুলোতে তারা হাত দেয়নি। রুশ সেনাব্যবস্থায় অনেক সংকট আমরা দেখছি। কিন্তু এরপরও তারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের প্রায় ১ লাখ বর্গকিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করছে।

rasia rus ukane ইউক্রেনের অভিজ্ঞতায় বদলাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী, পাল্লা দিতে প্রস্তুতি ন্যাটোর
একদল রুশ সেনা। ফাইল ছবি

ন্যাটোর মজুত

ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতায় পশ্চিমাদের অপ্রস্তুতির বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। এক সময় রাশিয়া এক দিনে যে পরিমাণ গোলাবর্ষণ করেছে তা ইউরোপীয় দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এক মাসে উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল না। ইউক্রেনের মিত্ররা নিজেদের মজুত থেকে অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে। কিন্তু এখন তারা সেই ঘাটতি পূরণ ও উৎপাদন বাড়ানোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এস্তোনিয়ার কর্মকর্তারা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর প্রতিরক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তারা জিডিপির দুই শতাংশের বদলে তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করার পক্ষে। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়াকে মোকাবিলার জন্য এটি নতুন বাস্তবতা।

এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, নব্বইয়ের দশকের এই শান্ত পরিস্থিতির কারণে আজকের এই অবস্থায় পড়েছে ইউরোপ। আমাদের মজুতে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই, আমাদের পর্যাপ্ত ট্যাংক নেই। বিষয়টি দুই বা আড়াই শতাংশের নয়। বিষয় হলো আমাদের সমন্বিতভাবে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এস্তোনিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র যে-ই বলুক না কেন, বার্তা একই: আমাদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে আমাদের প্রতিরক্ষায় আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সফলতা থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে ন্যাটো মিত্ররা। যেমন, এস্তোনিয়া নিজেদের টেরিটরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সের সংখ্যা ২০ হাজার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যা বর্তমান সংখ্যার দ্বিগুণ।

ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার মিত্ররাও নিজেদের দূরপাল্লার অস্ত্রকে আধুনিক করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট ব্যবস্থা বা হিমার্স কিনতে শুরু করেছে। নতুন করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। কারণ ইউক্রেনে বিভিন্ন শহরে আঘাত করতে মস্কো নিয়মিত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

কুইমেট বলেন, আমাদের জন্য এটি অস্তিত্বের প্রশ্ন। গত এক বছরে রাশিয়া কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করছে তা ভয়াবহ। মূলত একটি মধ্যযুগীয় যুদ্ধ।

সূত্র: নিউজউইক

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!