সিদ্ধার্থ সিংহের ৪০০টি গল্প নিয়ে প্রকাশিত হল— ‘চোর ধরার মেশিন এবং ৩৯৯’। কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কোয়ারের কাছে অভিযান বুক ক্যাফেতে। জমজমাট প্রেক্ষাগৃহে বইটি উদ্বোধন করলেন কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা এবং দে’জ পাবলিশিংয়ের কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে।
এ দিন সুধাংশুবাবু বলেন, ‘সিদ্ধার্থকে আমি প্রায় ৪৫ বছর ধরে চিনি। ও তো শুধু লেখালেখি করে না। লেখালেখি ছাড়াও আরও অনেক রকমের কাজ করে। এ রকম একনিষ্ঠ সাহিত্য সেবক আমি খুব কমই দেখেছি।’
এর পরেই তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা প্রকাশনায় খুব কম আসছে। কেউ যদি প্রকাশনাকে নিজের রুটি-রুজি হিসাবে নিতে পারেন, তবে সেটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এতে রাতারাতি অনেক অর্থ উপার্জন হবে না ঠিকই, কিন্তু এই ব্যবসা মিষ্টি ও সুখের। কোন বই পাঠকের ভাল লাগবে, কোন বই কেমনভাবে পাঠক নেবে, তা পাঠকই ঠিক করবে। প্রকাশককে শুধু নিষ্ঠার সঙ্গে বই প্রকাশের কাজটি করে যেতে হবে।’
আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট সাহিত্যিক নলিনী বেরা বলেন, ‘সিদ্ধার্থ এত লেখা কী করে লেখে আমি জানি না। পুজোর সময় দেখা হলে যখন জিজ্ঞেস করি, এ বার তুমি ক’টা পুজো সংখ্যায় লিখছ? ও তখন যে সংখ্যাটা বলে সেটা কখনওই তিন সংখ্যার কম নয়।
‘রতিছন্দ’ এবং ‘রিয়্যালিটি উপন্যাস’-এর প্রবর্তক বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক এবং বহুমুখী প্রতিভাধর সিদ্ধার্থ সিংহ এ দিন জানান, তাঁর নতুন বইয়ের ৪০০টি ‘ঝলক-গল্প’ই ৪০০ রকমের। কোনওটার সঙ্গে কোনওটার সামান্যতমও মিল নেই। আকারে অণুগল্পের মতো দেখতে হলেও এগুলো অণুগল্প নয়। অণুগল্পের চেয়েও অনেক অনেক বেশি চমকপ্রদ, মর্মস্পর্শী এবং বুদ্ধিদীপ্ত। এই গল্পগুলো ভারতীয় ঘরানায় এবং মানসিকতায় বেড়ে ওঠা বাঙালি পাঠকেরা আদৌ নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে তাঁর যথেষ্ট সংশয় ছিল। তাই প্রথম দিকে এই গল্পগুলো প্রকাশ করার জন্য তিনি দেন নরওয়েয়ে থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা ‘সাময়িকী’, ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ‘পাক্ষিক প্যারিস টাইমস’, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে প্রকাশিত ‘প্রভাত ফেরী’, ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস থেকে প্রকাশিত ‘লা বাংলা টাইমস’, কানাডা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ দিগন্ত’, ইতালির পালেরমো থেকে প্রকাশিত ‘আর্লি স্টার’ পত্রিকায়। জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং বাংলাদেশ— একই সঙ্গে মোট পাঁচটি দেশ থেকে প্রকাশিত ‘শুদ্ধস্বর’ পত্রিকা ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্র-পত্রিকায়। অনুবাদও হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায়। এই গল্পগুলো নিয়ে স্পার্ক ফিল্ম হতে থাকে হিন্দি, ওড়িয়া, মালায়ালাম তামিল এবং তেলুগু ভাষায়। বেশ কয়েকটি বাংলাতেও হয়েছে। তার পরেই শুরু হয় দু’পার বাংলায় ঝলক-গল্পের ঝড়। সেখান থেকে বাছাই করা তাঁর ৪০০টি ঝলক-গল্প নিয়ে সংকলিত হয়েছে এই বইটি।
এ দিন সুধাংশু শেখর দে, নলিনী বেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লেখক সিদ্ধার্থ সিংহ, সাংবাদিক ও আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক গৌতম বসু মল্লিক, বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক, অধ্যাপক মলয় রক্ষিত, কবি মধুবন চক্রবর্তী এবং ‘এবং অধ্যায়’ প্রকাশনা সংস্থার কর্নধার ধীমান ব্রহ্মচারী-সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা।
লেখক এ দিন আরও বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ঝলক-গল্প শুধু বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র একটি শাখা হিসেবেই নয়, অচিরেই প্রধান এবং সব চেয়ে উজ্জ্বল শাখা হিসেবেই জ্বলজ্বল করবে।’#