থাইল্যান্ডে নির্বাচনে সেনা-সমর্থিত সরকারকে হারিয়ে বিরোধীদের জয়
সেনা-সমর্থিত সরকারকে হারিয়ে থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে দেশটির বিরোধী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এই দলটি বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক বিরোধী দল ফেউ থাই পার্টি।
তবে এই দুই দলের কোন দলটি সরকার গঠন করবে বা উভয় দল মিলে জোট সরকার গঠন করবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। সোমবার (১৫ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক দশকের রক্ষণশীল সেনা-সমর্থিত শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে রোববারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সাথে জোটবদ্ধ দলগুলোকে পরাজিত করেছে থাইল্যান্ডের বিরোধী দল। ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষে উদারপন্থি মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এবং পপুলিস্ট ফেউ থাই পার্টি অনেক এগিয়ে রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত নয় যে, কে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
রয়টার্স বলছে, প্রাথমিক ফলাফলে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি শীর্ষে রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফেউ থাই পার্টি।
রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, উভয়ই জান্তার রাজনৈতিক দল পালং প্রচারাত এবং সেনাবাহিনী সমর্থিত ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির আসন সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ বেশি আসনে জিতবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি বা এমপিএফ-এর নেতা ৪২ বছর বয়সী পিটা লিমজারোনরাত নির্বাচনের এই ফলাফলকে ‘চাঞ্চল্যকর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং সরকার গঠনের সময় তার দলের মূল্যবোধের প্রতি অটল থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘এটি নিশ্চিতভাবেই হবে স্বৈরাচার-বিরোধী, সামরিক-সমর্থিত দল। এটা অনুমান করা নিরাপদ যে, থাইল্যান্ডে সংখ্যালঘু সরকার আর সম্ভব নয়।’
পিটা লিমজারোনরাত আরও বলেছেন, তিনি ফেউ থাইয়ের সাথে জোট বাঁধতে উন্মুক্ত, তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সেট করে ফেলেছেন। টুইটারে তিনি বলেছেন, ‘এটি এখন স্পষ্ট যে, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি সারা দেশের মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।’
মূলত নির্বাচনের আগে ৪২ বছর বয়সী সাবেক এই টেক এক্সিকিউটিভের পক্ষেও জনমত জরিপ দ্রুত বাড়ছিল। কারণ দলটির তরুণ, প্রগতিশীল এবং উচ্চাভিলাষী প্রার্থীরা একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী বার্তা নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। আর তা হলো- থাইল্যান্ডকে পরিবর্তন করতে হবে।
রয়টার্স বলছে, রোববারের নির্বাচনের এই প্রাথমিক ফলাফল দেশটির সামরিক এবং তার সহযোগীদের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। কিন্তু দেশটির সংসদীয় বিধি তাদের পক্ষে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পেছনে এবং পর্দার আড়ালে যুক্ত থাকার কারণে তারা এখনও সরকারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় বছর দায়িত্বে থাকার পর আবারও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন এবং সতর্ক করে দেন, সরকার পরিবর্তনের ফলে সংঘাত হতে পারে।
রোববার নির্বাচনের পর প্রায়ুথ চান-ওচা তার ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির সদর দপ্তর থেকে চুপচাপ সরে যান। সেসময় সেখানে খুব কম সমর্থককে দেখা যায়। প্রায়ুথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের দেশ শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ হবে। আমি গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে সম্মান করি। ধন্যবাদ।’
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫০০টি আসনের মধ্যে ১৫১টি জিতেছে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। অন্যদিকে এই দলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ফেউ থাই পার্টির চেয়ে এখনও ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা এই ফলাফলকে রাজনৈতিক ভূমিকম্প বলে অভিহিত করছেন যা জনমতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে তুলে এনেছে। অন্যদিকে সরকারি জোট মাত্র ১৫ শতাংশ আসনে জয়লাভ করেছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, থাইল্যান্ডে রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ও সিনেট সদস্যরা নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। আগামী আগস্ট মাসে সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আসন সংখ্যা ৫০০। এর মধ্যে ৪০০টিতে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাকি ১০০ আসনে জয়ী দলগুলো তাদের প্রাপ্ত আসন অনুযায়ী আসন পেয়ে থাকে। আর সিনেটের সদস্য সংখ্যা ২৫০। সামরিক বাহিনী তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। নিম্নকক্ষে যে দলগুলোর অন্তত ২৫ আসন থাকবে তারা একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনীত করতে পারবে।
আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হতে পারে। নিম্নকক্ষের ৫০০ ও সিনেটের ২৫০ মিলে সাড়ে সাতশো ভোটের মধ্যে যে প্রার্থী ৩৭৬ ভোট পাবেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালের পর থেকে থাইল্যান্ডে ১২ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ২০০৬ সাল ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফিউ থাই পার্টির জয়ের পর সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছিল। এবারও সেনা-সমর্থিত কোনও সরকার ক্ষমতায় না থাকলে আবারও তেমনটা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।