তিন মৌসুম পর লা লিগা চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা
শিরোপার সুবাসে মাঠে নেমে চমৎকার পারফরম্যান্স উপহার দিল বার্সেলোনা। ছন্নছাড়া এস্পানিওলের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখে মেতে উঠল গোল উৎসবে। কোচ শাভি এর্নান্দেসের হাত ধরে নতুন যুগের ঘোষণা দেওয়া দলটি চার ম্যাচ হাতে রেখে পুনরুদ্ধার করল লা লিগা শিরোপা।
এস্পানিওলের মাঠে রোববার রাতে রবের্ত লেভানদোভস্কির জোড়া গোলে ৪-২ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। তাদের অন্য দুই গোলদাতা আলেহান্দ্রো বালদে ও জুল কুন্দে।
৩৪ ম্যাচে ২৭ জয় ও ৪ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট হলো ৮৫। সমান ম্যাচে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে আসরের শেষ দিনে এস্পানিওলকে ২-১ গোলে হারিয়ে চতুর্থ লিগ শিরোপা জিতেছিল বার্সেলোনা। সেই দলকে হারিয়ে এবার ২৭তম বারের মতো লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হলো তারা।
আগের ২৬ শিরোপার ১০টিই বার্সেলোনা জিতেছে একবিংশ শতাব্দীতে; ক্লাবের ইতিহাসের সেরা তারকা লিওনেল মেসির উপস্থিতিতে। সেই হিসেবে ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম দলটি মেসিকে ছাড়া লিগ শিরোপার স্বাদ পেল।
উৎসবের রাতে সফরকারীদের উদযাপন শুরু হতে পারতো ষষ্ঠ মিনিটেই। ডি-বক্সে জুল কুন্দের কাটব্যাকে বল ফাঁকায় পেয়ে কোনাকুনি শট নেন পেদ্রি, কিন্তু বল চলে যায় বাইরে। এটা গোল হয়নি, ডাগআউটে কোচ শাভি এর্নান্দেসের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না!
ওই হতাশা অবশ্য বেশিক্ষণ থাকেনি। পাঁচ মিনিট পরই দলকে এগিয়ে নেন লেভানদোভস্কি। বাঁ দিক থেকে বালদের পাস ছয় গজ বক্সে পেয়ে নিখুঁত ছোয়া দিলেন পোলিশ তারকা, গোলরক্ষক ছিলেন অন্যদিকে ঝুঁকে, বিনা বাধায় এক ড্রপে বল খুঁজে পেল ঠিকানা।
একচেটিয়া চাপ ধরে রেখে ২০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে পেদ্রির বাড়ানো বল দূরের পোস্টে পেয়ে বাঁ পায়ের ভলিতে গোলটি করেন স্প্যানিশ লেফট-ব্যাক বালদে।
চার মিনিট ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতেন লেভানদোভস্কি। তবে তার কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক ফের্নান্দো।
৪০তম মিনিটে ঠিকই দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান লেভানদোভস্কি। পাল্টা আক্রমণে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে দূরের পোস্টে দারুণ পাস বাড়ান রাফিনিয়া। এবারও গোলরক্ষক আগেই বল ধরতে এগিয়ে গিয়ে ব্যর্থ হন, নিখুঁত শটে ফাঁকা জালে বল পাঠান লেভানদোভস্কি।
প্রথমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও পরে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে গত এক যুগে জার্মান ফুটবলে গোলমেশিন হয়ে ওঠা লেভানদোভস্কি নতুন চ্যালেঞ্জেও আছেন একই ধারায়। গত জুলাইয়ে বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে লা লিগায় অভিষেক মৌসুমেই পিচিচি ট্রফি জয়ের পথে আছেন তিনি। আসরে এখন পর্যন্ত ৩০ ম্যাচে তিনি করেছেন সর্বোচ্চ ২১ গোল।
বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান কমানোর অনায়াস সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি গত সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনা থেকে এস্পানিওলে যোগ দেওয়া মার্টিন ব্রাথওয়েট। ডি-বক্সে অরক্ষিত এই ফরোয়ার্ডের শট হাত প্রসারিত করে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে ১০ শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখতে পারে বার্সেলোনা, যার তিনটিতে মেলে সাফল্য। ৫৩তম মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম শটে ব্যবধান আরও বাড়ায় তারা। ডি ইয়ংয়ের চমৎকারভাবে বক্সে বাড়ানো থ্রু বল হেডে ঠিকানায় পাঠান ফরাসি ডিফেন্ডার কুন্দে।
৭৩তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান কমান হাভিয়ের পুয়াদো। প্রতি-আক্রমণে সবাইকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকেই চিপ শটে আগুয়ান টের স্টেগেনের ওপর দিয়ে বল লক্ষ্যে পাঠান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। প্রথমে অফসাইডের বাঁশি বাজলেও ভিএআরে পাল্টায় সিদ্ধান্ত।
দুই মিনিট যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ সময়ে আরেকটি গোল শোধ করে এস্পানিওল। ফের্নান্দো কালেরোর হেড পোস্টে প্রতিহত হওয়ার পর ফিরতি বল গোলমুখ থেকে সহজেই জালে পাঠান হোসেলু।
এর পরপরই বাজে শেষের বাঁশি। কোচ ও বেঞ্চের খেলোয়াড়রা মাঠে দৌড়ে যান। শুরু হয় বার্সেলোনার শিরোপা উৎসব।
বছর দুয়েক আগের কথা; আর্থিক দুরাবস্থায় ক্লাবের অবস্থা নাজেহাল, মেসিসহ অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের হারিয়ে দলের অবস্থাও ভীষণ নাজুক। ২০২১-২২ মৌসুম শুরু হতে পারফরম্যান্স ঠেকে তলানিতে।
নতুন দিশায় শুরু করতে শাভিকে দায়িত্ব দেয় ক্লাব। আস্থার প্রতিদান দিতে বেশি সময় নিলেন না সাবেক তারকা এই মিডফিল্ডার। তার কোচিংয়ে প্রথম মৌসুমে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে লিগে রানার্সআপ হয় বার্সেলোনা।
সেই আত্মবিশ্বাসে এবার লিগের শুরু থেকেই দারুণ ধারাবাহিক হয়ে ওঠে দলটি। চাম্পিয়ন্স লিগে টানা দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হলেও লা লিগায় তারা ছিল অবিচল।
৩৪ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছে বার্সেলোনা। দারুণ এই পথচলায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দলটির রক্ষণভাগের দৃঢ়তা; আসরের সবচেয়ে কম মাত্র ১৩টি গোল হজম করেছে স্পেনের দ্বিতীয় সফলতম ক্লাবটি।
মৌসুমে বার্সেলোনার এটি দ্বিতীয় শিরোপা। গত জানুয়ারিতে রিয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জয় করে দলটি।