সুদানে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বেড়েছে, সংঘর্ষ থামেনি
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে সৃষ্ট সংকট অব্যাহত রয়েছে। দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীগুলো নতুন করে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণ করতে সম্মত হয়েছে।
আগের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তারা এ বিষয়ে সম্মত হয়। যদিও যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সুদানে লড়াই এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে নতুন করে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি পুনর্নবীকরণ করতে সম্মত হয়েছে সুদানের সামরিক বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুগুলো। নতুন এই যুদ্ধবিরতি আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য কার্যকর থাকবে।
মূলত সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরই যুদ্ধবিরতির সময় আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য বর্ধিতকরণ সম্ভব হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির পরও রাজধানী খার্তুমে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিবিসি বলছে, পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির সময় হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে পালানোর চেষ্টা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেসময় কয়েক ডজন দেশ সুদান থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
সেনাবাহিনী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহের এই লড়াইয়ে শত শত লোক নিহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, স্থানীয় সময় মধ্যরাতে সুদানে পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার প্রথম দিকে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি বর্ধিতকরণে সম্মত হয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-ও তা কয়েক ঘণ্টা পরে মেনে নেয়।
এদিকে সংঘাত বন্ধে দক্ষিণ সুদান শান্তি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সেনাবাহিনী আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য ‘খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করছে’। এমনকি যুদ্ধবিরতি অসম্পূর্ণ হলেও তা সহিংসতা হ্রাস করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়ের বলেছেন, যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এদিকে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সুদানের সেনাবাহিনী খার্তুমে তাদের অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া পশ্চিম দারফুর অঞ্চল এবং অন্যান্য প্রদেশেও লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
উভয়পক্ষের এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১২ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন। যদিও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, রোগের প্রাদুর্ভাব এবং চিকিৎসা পরিষেবার অভাবের কারণে ‘আরও অনেক’ মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বিরোধপূর্ণ এলাকায় বেশিরভাগ হাসপাতাল কাজ করছে না এবং রাজধানী খার্তুমের ৬০ শতাংশেরও বেশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে।
সুদানের সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা সুদানের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে ‘রাজধানীর কিছু অংশে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল’। বিবিসির পক্ষে সেনাবাহিনীর এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যসহ বিদেশি বহু দেশ তাদের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব সুদান ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা বলার সময় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়ের আমেরিকানদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুদান ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান।
নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত থাকলেও এখনও অনেক বিদেশি সুদানে আটকে আছেন। অন্যদিকে স্থানীয় বেসামরিক নাগরিকরা রাজধানী খার্তুম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ সংঘাতের কারণে সেখানে খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা দেখা দিয়েছে।