যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবার শি জিনপিং-এর সাথে জেলেনস্কির ফোনালাপ
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ‘দীর্ঘ এবং অর্থপূর্ণ’ ফোনালাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসণ শুরুর পর এই প্রথম শি-জেলেনস্কি যোগাযোগ হলো বলে জানায় বিবিসি।
এক টুইটে জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি এই ফোনালাপ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী প্রেরণা দেবে।’’ ফোনালাপে উভয় নেতা বেইজিং এ ইউক্রেইনের একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়েও একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
চীনের পক্ষ থেকেও ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, তারা সবসময় ‘শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে’।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধের প্রথম কয়েকমাস এ বিষয়ে চুপচাপ থাকলেও সম্প্রতি চীন ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।
চীন বার বার বলে আসছে, ইউক্রেইন যুদ্ধে পশ্চিমাদের মত তারা একটি পক্ষকে বেছে নেয়নি। বরং নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। যদিও মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে কোনো দেশই রাখঢাক করেনি।
জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার রেজ্যুলেশন গ্রহণ করলেও চীন কখনোই ইউক্রেইনে আগ্রাসণের কারণে মস্কোর নিন্দা জানায়নি। তার উপর গত মাসে প্রেসিডেন্ট শি রাশিয়া সফর করে এসেছেন। দুই দিনের ওই সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শিকে নজিরবিহীন সম্মান দেখিয়েছেন।
পশ্চিমাদের অভিযোগ, চীন গোপনে রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তা করছে। শি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। শি’র রাশিয়া সফরের কয়েকদিনের মধ্যে জেলেনস্কি তাকে আলোচনার জন্য কিইভ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বুধবারের ফোনালাপের বিষয়ে চীন যে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে সেখানে শি-র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘চীন দায়িত্বশীল বৃহৎ দেশ হিসেবে কখনো অন্য পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আগুন জ্বলতে দেবে না কিংবা সেই আগুনে ঘি ঢালবে না অথবা নিজেদের লাভের জন্য সেই সংকটের সুযোগ নিতেও দেবে না।”
চীনের এই বিবৃতি নিশ্চিতভাবেই তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রর জন্য বড় ধাক্কা।
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেইনের পক্ষ নিয়েছে। দেশটিকে সামরিক এবং আর্থিক উভয় ধরণের সহায়তাই দিয়েছে। কেউ কেউ ইউক্রেইন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করতে শুরু করেছে।
ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চীনের সাহায্যের সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরের স্বপ্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, রাশিয়া পুরো ইউক্রেইন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কোনো ইচ্ছা এখনো প্রকাশ করেনি। এটা যুদ্ধ অবসানের আলোচনার বসার ক্ষেত্রে এটা কিইভের মূল দাবি।
অন্যদিকে, সমলোচকরা বলছেন, পুতিনের সঙ্গে শির বন্ধুত্বই শুধু দৃঢ় হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। বরং রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যও ক্রমবর্ধমান।
আর বেইজিং মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে চাইছে কিন্তু রাশিয়া ‘আক্রমণ করেছে’, এমনকি এ কথাটি পর্যন্ত তারা বলতে চাইছে না। তাই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় বেইজিংয়ের অবস্থান নিয়েই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে সামলোচকরা যাই বলুন, জেলনস্কি কিন্তু বার বার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, চীন তাদের বিশাল সম্পদ এবং বৈশ্বিক প্রভাবের দ্বারা যুদ্ধের ফলাফলে পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।
তিনি বুধবার সাবেক মন্ত্রী পাভলো রিয়াবিকিনকে বেইজিংয়ের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।