কেনিয়ায় ‘অনাহারে মৃত্যুবরণ’: উদ্ধার মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে ৮৯
এক ধর্ম প্রচারক তার অনুসারীদের স্বর্গে পেতে ‘অনাহারে মৃত্যুবরণ’ করতে বলেছেন, এমনটি জানার পর তা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে কেনিয়ার পুলিশ কবর খুঁড়ে এখন পর্যন্ত ৮৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিথুরে কিনদিকি।
গত কয়েক দিনে কবর খুঁড়ে একের পর এক মৃতদেহ বের করে আনছে পুলিশ। দেশটির উপকূলীয় শহর মালিন্দির কাছে এ ঘটনা ঘটেছে। কবর খুঁড়ে বের করা মৃতদেহগুলোর মধ্যে শিশুদের লাশও আছে।
ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের কিনদিকি বলেন, ‘‘যারা এখানে দায়িত্বে আছেন তারা আমাকে জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত উদ্ধার করা ৭৩টি মৃতদেহের সঙ্গে আজ এ অবধি আরো ১৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মোট মৃতদেহের সংখ্যা এখন ৮৯।”
সেখান থেকে পুলিশ আরো তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে বলেও জানান তিনি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হলো বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শাকাহোলা বনে ওই অগভীর কবরগুলো পাওয়া গেছে, গত সপ্তাহে এখান থেকেই ‘গুড নিউজ ইন্টারন্যাশনাল চার্চ’ এর ১৫ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছিল বলে খবর প্রকাশ করেছিল বিবিসি।
পল ম্যাকেঞ্জি এনথেঞ্জ নামের ওই ধর্মপ্রচারককে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কেনিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম কেবিসি তাকে একজন ‘কাল্ট নেতা’ বলে বর্ণনা করেছে। তদন্তে এ পর্যন্ত ৫৮টি কবর শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ম্যাকেঞ্জি কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছেন, কিন্তু আদালত তাকে জামিন দেয়নি। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৯ সালেই তিনি তার গির্জাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার অনুসারীদের ‘যিশুখ্রিস্টের সঙ্গে মিলিত হতে’ অনাহারে থাকতে বলেছিলেন।
কেনিয়ার দৈনিক পত্রিকা স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, ওই লোকজন অনাহারে মারা গিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হতে প্যাথোলজিস্টরা তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখবেন।
নিজেদের অনাহারে রেখে পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, সন্দেহভাজন এমন চারজনের লাশ উদ্ধারের পর ১৫ এপ্রিল ম্যাকেঞ্জিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মালিন্দির সোশ্যাল জাস্টিস সেন্টারের ভিক্টর কাউডো সিটিজেন টেলিভিশনে বলেছেন, “আমরা যখন ওই বনের একটি এলাকায় উপস্থিত হলাম যেখানে বড় ও লম্বা একটি ক্রস ছিল, আমরা জানতাম এর মানে সেখানে পাঁচজনেরও বেশি মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে।”
স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ধর্ম প্রচারক তিনটি গ্রামকে নাজারেথ, বেথেলহেম ও জুডিয়া নামে নামকরণ করেছিলেন এবং অনুসারীদের পুকুরে নিয়ে ব্যাপ্টটাইজ করার পর অনাহারে থাকতে বলতেন।
এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেনিয়ার রেড ক্রসের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় হাসপাতালে স্থাপিত একটি ‘ট্রেসিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং ডেস্ক’ থেকে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ থাকার কথা জানা গেছে।
কেনিয়া একটি ধর্মপ্রবণ দেশ এবং এর আগেও সেখানে এ ধরনের বিপজ্জনক, অনিয়ন্ত্রিত গির্জা অথবা কাল্টে প্রলুব্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।