সুদানে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে লড়াইরত দুই পক্ষ
সুদানে যুদ্ধরত দলগুলো ৭২ ঘণ্টার একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাত থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
সুদানে লড়াই শুরু হওয়ার পর এটি তৃতীয় দফার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো। এর আগের দুই দফা চেষ্টা কার্যকর করা যায়নি।
মি. ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে আলোচনার পরে সেনাবাহিনী এবং মিলিশিয়া র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
গত ১৫ই এপ্রিল সুদানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অন্তত চারশো মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মীও রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে যে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। দেশটির বেশিরভাগ হাসপাতাল বন্ধ। পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
আটকে পড়া লোকজনের বাড়িতেও খাবারের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। একারণে দেশটিতে মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সুদানের এই সহিংসতা পুরো এলাকার জন্য বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই খার্তুমের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেখানে খাবার ও পানির সরবরাহ অনেক সীমিত হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক মানুষ নাইল নদীর পানি খেতে বাধ্য হচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির ফলে খার্তুমের বাসিন্দারা শহর ছাড়ার সুযোগ পাবে। সেই সঙ্গে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করভে বিদেশি সরকারগুলো।
খার্তুমে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় কূটনীতিক এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
মি. ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র খার্তুমে কূটনীতিক উপস্থিতি আবার চালু করার কথা ভাবছে, কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি ‘খুবই চ্যালেঞ্জিং’ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সহিংসতার কারণে এখন দেশটি থেকে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানে ১৫ই এপ্রিল সহিংসতা শুরু হয়। এরপর তা দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
সুদানে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করছে। এই কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতাকে ঘিরেই এই লড়াই।
এরা হলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। এই দুই জেনারেল দেশটি পরিচালনা করে আসছিলেন।
কিন্তু এক পর্যায়ে আগামীতে দেশটি কিভাবে পরিচালিত হবে এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
প্রায় এক লাখ সদস্যের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং তার পরে নতুন এই বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবে – তা নিয়েই মূলত এই বিরোধ।
নতুন বাহিনীতে কে কার অধীনে কাজ করবেন এ নিয়ে বিরোধের জের ধরেই সম্প্রতি দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন স্থানে আরএসএফ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি সুদানি সেনাবাহিনী। তারা এটিকে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে।
আর এর জের ধরেই শনিবার অর্থাৎ ১৫ই এপ্রিল সকাল থেকে লড়াই শুরু হয়। তবে কোন পক্ষ প্রথম আক্রমণ করেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।