সুদানে যুদ্ধের তীব্রতায় রাজধানী থেকে পালাচ্ছে প্রচুর মানুষ
সুদানে সামরিক বাহিনীর দুটো গ্রুপের মধ্যে পঞ্চম দিনের মতো লড়াই অব্যাহত থাকায় রাজধানী খার্তুম থেকে প্রচুর সংখ্যক বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর একেবারে কেন্দ্রেও তীব্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শহরের ভেতরে প্রচণ্ড গোলাগুলি এবং আকাশে গর্জন করে যুদ্ধবিমান উড়তে শোনা যাচ্ছে।
সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর ও বিমানবন্দরের আশেপাশে লড়াই-এর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলোতে লোকজন প্রাণ বাঁচাতে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিবদমান দুটো পক্ষের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা অস্ত্র-বিরতির যে সমঝোতা হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
সংবাদদাতারা বলছেন, সংঘর্ষের কারণে বেসামরিক লোকজন তাদের বাড়িঘরের ভেতরে আটকা পড়ে আছেন। যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় তাদের সংগ্রহে থাকা খাদ্য ও খাবার পানিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
খার্তুমের ভেতরে নতুন করে একের পর বিস্ফোরণের পর তারা এখন এই শহর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
সামরিক বাহিনীর ভেতরে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে শীর্ষ দুই জেনারেলের গ্রুপের মধ্যে এই লড়াই চলছে। তারা হচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
জেনারেল দাগালোর আরএসএফ বাহিনীর যোদ্ধারা সাঁজোয়া যান ও পিক-আপ ট্রাকে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর বিমান থেকে আরএসএফের টার্গেট লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিমানবন্দরের আশেপাশের রাস্তায় বহু মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতালের ওপর বোমা
খবরে বলা হচ্ছে, যুদ্ধের কারণে প্রায় ৩৯টি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সুদানে ডাক্তারদের এক সমিতি বলেছে রাজধানী খার্তুম ও আশেপাশের রাজ্যে ৫৯টি হাসপাতালের মধ্যে ৩৯টিতে বোমা পড়েছে কিম্বা সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সেন্ট্রাল কমিটি অব সুদানিজ ডক্টরস বলছে ২০টি হাসপাতালে পুরোপুরি কিম্বা আংশিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এবং বিদেশী দূতাবাসগুলো তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। জাতিসংঘ বলছে সংঘর্ষে এপর্যন্ত অন্তত দু’শ জন নিহত হয়েছে।
ত্রাণের গুদাম লুট
যোদ্ধারা বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার কার্যালয় দখল করে নিয়েছে। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেলান্ড বিবিসিকে বলেছেন সুদানে বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে লোকজনকে সাহায্য করাও “অসম্ভব” হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান লড়াই শুরু হওয়ার আগে দেড় কোটিরও বেশি মানুষের মানবিক ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজন হতো, কিন্তু সংঘাত শুরু হওয়ার পর “সব ধরনের ত্রাণ তৎপরতা দৃশ্যত বন্ধ হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন তাদের অন্তত চারজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন, এবং তাদের অনেক গুদাম লুট হয়ে গেছে। “ত্রাণ-কর্মীদের অনেকেই প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে আছেন,” বলেন এগেলান্ড।
কেনিয়া, জিবুতি এবং দক্ষিণ সুদানের নেতারা যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে দুই জেনারেলের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের পরিকল্পিত সুদান সফর বাতিল করেছেন।
কেন এই লড়াই
সুদানে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করছে। এই কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতাকে ঘিরেই এই লড়াই।
এরা হলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে আগামীতে দেশটি কিভাবে পরিচালিত হবে এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।
প্রায় এক লাখ সদস্যের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং তার পরে নতুন এই বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবে তা নিয়েই মূলত এই বিরোধ।
নতুন বাহিনীতে কে কার অধীনে কাজ করবেন তা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এই সম্প্রতি দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন স্থানে আরএসএফ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি সুদানি সেনাবাহিনী। তারা এটিকে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে। তার জের ধরেই শনিবার সকাল থেকে লড়াই শুরু হয়। তবে কোন পক্ষ প্রথম আক্রমণ করেছে তা স্পষ্ট নয়।