ব্যাখ্যাহীন আজও
কথা নেই, হাওয়া আছে
অনেক হাওয়ায় দিনের সরল মন, জটিল মন
কোথাও উড়ে যেতে চায়
আমিও ব্যাখ্যাহীন নিবেদনে ফিরে আসি।
বোঝাতে পারি না নিজেকে:
পুস্তকগুলোতে যা লেখা হয়
অথবা যা লেখা হয় না
কিছুটা ড্যাসের কাছে ফাঁকা,শূন্য ঘর পড়ে থাকে
অথবা পূর্ণচ্ছেদের পর চেয়ে থাকা পরের পংক্তিতে
বিড়ম্বনা কিছু থেকে যায়।
ওখানেই একটু আলাদা হয়ে দেখি:
বিস্ময়ের মাঠ, গতিময় ঢেউয়ের নদী
অথবা সবুজের গাছপালা থেকে গেছে।
বহু প্রাচীনকাল থেকে এখানেই
একটি নম্র ইতিহাস কথা পায়নি বলে
তার দীর্ঘ শ্মশ্রুতে কারুণ্য ঝরে।
স্তব্ধতার নিসর্গে সেই টুকরো টুকরো প্রোজ্জ্বল সীমানা
অথবা একটি অনাবিষ্কৃত গুহা
যেখানে এলোমেলো মানব কঙ্কালের প্রচ্ছায়া।
মহাকাল সেদিকেই চলে গেছে
আমরা হওয়ার কাছে ব্যাখ্যাহীন
সভ্যতার ঘুম ভেঙে চাওয়া কিছু প্রাণী।
ক্ষত
ক্ষতগুলি সেলাই হয়নি
রোজ রাতে শিয়াল এসে চাটে
দৈবের কৌশলে চুপ থাকি
অমোঘ লতাটি তবু মাচায় উঠে কাঁদে
ঘরমুখো সব বার্তা যায়
আমি পড়ে থাকি রাস্তায়
অসম্ভব না হলে কেউ আসে না এখানে
যদিও মনে মনে সবাই কুসুম ফোটায়
দেখো অন্ধ, দেখো রাস্তার গল্প
স্নেহের সবুজ ঘাসে শব্দ বর্ণ
কী প্রেক্ষিতে উজ্জ্বল হচ্ছে
নান্দনিককে তবুও ছুঁড়ে মারছে বিষাদ
দিনের পতনে আর একটি দিনের জন্ম হয়
জন্মে জন্মে ভরে যায় ঘুম
ভুল কালসর্প নিয়ে সবাই আসে দলে দলে
একটি প্রত্যয় যুগ ছোবলের ক্ষত সহ্য করে।
সীমানা
কোন্ সীমানায় রাখবে আমাকে? রাখো—
সীমানায় সীমানায় হাঁটি
যদিও এখানে রাস্তা নেই
সমস্ত সীমানা জুড়ে আর্তনাদ জেগে আছে
দেশকে দেশের বিকল্প হতে পারে?
হৃদয় কি হৃদয়ের?
যদিও বোঝানো যায়নি সব
ইশারায় যতটা বলা গেছে
মাটি ভাগ করে নিয়ে
মৃত্যু ভাগ করে নিয়ে
বেঁচে আছে দেশ
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সব মহিমার লাশ
নর্ম সহচরী
করুণার ভাষা জানি নাকো আমি
বিকেল হয়ে গেলে নর্ম সহচরী
এসো হে, আমিও ভিখিরি তোমার নিকটে
আমাকে শেখাও সভ্য হতে
এখনো শেকলে ক্রীতদাসের রক্ত লেগে আছে
আমিও জেগে আছি মৃত্যুর এপারে
চাবুকের দাগ গুনে গুনে
আমার দেহের ভূগোলে বহুদিন
জন্মায়নি কিশলয়
কবিতা ছন্দ পায়নি
শব্দগুলি পুড়ে গেছে শতাব্দীর তাপে
করুনার কাছে বসে তুমি নীল অক্ষর দাও
অক্ষরে-অক্ষরে সূর্য
মুক্তির নতুন কৌশল
আমাদের বিতর্কিত তীব্র উঠোনে
আছড়ে পড়ুক রোদ
মহোৎসব হোক তবে
সারারাত গান ঝরুক চাঁদে
স্মৃতির মাঠে
কেবলি স্মৃতির মাঠে হরিণের শিং ছুটে আসে
আমি স্তব্ধ বাক্ পাখিটির কথা ভাবি
আলো জ্বালি না
একাকী প্রহর গুনে গুনে তার কাছে যাই
কত জল আনাচ-কানাচ ভরে আছে
ঢেউ ওঠে আর নাচে পালতোলা তরুণী নৌকারা
কত শতকের মাঠ?
ক্ষত জুড়ে ছায়া ফেলে আছে
স্মৃতির রশ্মিতে ভোরের চকাস হওয়া পথ
কিছুটা শিশির সিক্ত নাভি
বাতাসে হেমন্তকাল যাওয়া-আসা করে
চিনে নিই তাকে, আঙুলে আঙুল এখনো জড়াই
পিছিয়ে পড়া মানুষ
পিছিয়ে যাচ্ছি
পিছিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি
লাগাম দেওয়া ঘোড়াগুলি
এগিয়ে যাচ্ছে
ঘোড়ার পিঠে ঘোড়সওয়ারী
লাল টুকটুক মুখগুলি
হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে
পথের ধুলো উড়ে আসছে
আমার দিকে
ধুলোয় ঢাকা ভবিষ্যৎও
পাক খাচ্ছে
পাক খাচ্ছে
এই বিকেলে কারা এত রঙ মাখছে?
হৃদয় নেই?
খাঁচার ভেতর টিয়াপাখি ডেকে উঠল
ডেকে উঠল
শুনতে পাচ্ছি —
আমি একা পিছিয়ে পড়ছি
ধুলো এসে পাক খাচ্ছে……