ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা
জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার স্থানীয় সময় ভোররাতে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে ইসরায়েলি পুলিশ কয়েক ডজন মুসল্লির ওপর হামলা চালায়। ‘দাঙ্গার জবাবে’ তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলি পুলিশের।
এ ঘটনায় ফিলিস্তিনের পুরো পশ্চিম তীর ও গাজাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ভোর হওয়ার আগেই গাজা থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল লক্ষ্য করে অন্তত নয়টি রকেট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। এর জবাবে তারা তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় বিমান হামলা চালায়।
গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি বিমান হামলার সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে গাজার মাটি থর থর করে কেঁপে ওঠে ও শব্দ অবরুদ্ধ ওই উপকূলীয় ভূখণ্ডটির সব এলাকা থেকে শোনা যায়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজার দক্ষিণাংশের সীমান্ত বেড়া বরাবর হামাসের অবস্থানগুলোতে গোলাবর্ষণও করেছে।
গত বছরজুড়ে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে সহিংসতা বেড়েছে আর চলতি মাসে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে সেখানে উদ্বেগ বিরাজ করছে, কারণ মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস আর ইহুদিদের নিস্তারপর্ব ও খ্রিস্টানদের ইস্টার একই সময়ে পড়েছে। ২০২১ সালে রমজান মাসে এই আল আকসা মসজিদ থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র যুদ্ধের সূচনা করেছিল যা ১০ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, আল আকসায় ইসরায়েলি পুলিশের পিটুনি ও রবার বুলেটে ১২ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের চিকিৎসা কর্মীদের ওই এলাকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
“মসজিদ প্রাঙ্গণের পূর্ব পাশে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে। এতে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল আমি তা বর্ণনা করতে পারবো না,” বলেছেন আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া ফাহমি আব্বাস।
“তারপর তারা জোর করে ভেতরে প্রবেশ করে প্রত্যেককে পেটায়। তারা লোকজনকে আটক করে আর তরুণদের মুখ মাটির ওপর রাখতে বাধ্য করে আর তাদের পেটাতেই থাকে,” বলেছেন তিনি।
ইসরায়েলি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, মুখোশধারী আন্দোলনকারীরা লাঠি, পটকা ও পাথর নিয়ে মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিলে তারা প্রাঙ্গণটিতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।
“পুলিশ যখন প্রবেশ করে, আন্দোলনকারীদের একটি বড় দল মসজিদের ভেতর থেকে তাদের দিকে পাথর ও পটকা ছুড়ে মারে,” বিবৃতিতে এমনটি বলেছে তারা। এ সময় এক ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তার পা জখম হয় বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
আল আকসা মসজিদ ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। ইহুদি ধর্মের প্রাচীন দুটি মন্দিরের অবস্থান হিসেবে স্থানটিকে তারা শ্রদ্ধার চোখে দেখে। এখানে আসা ইহুদি দর্শনার্থীদের সঙ্গে যে কোনো সময় সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মুসলিম মসজিদ প্রাঙ্গণে রাত্রিযাপন শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনি আইনজীবী ফিরাস আল জিবরিনি জানিয়েছেন, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রায় ৫০০ জনকে ধরে নিয়ে গেছে।
এই ঘটনায় আরব দেশগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে জর্ডান ও মিশর আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসুল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। সৌদি আরব (যার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে ইসরায়েল) বলেছে, আল আকসায় হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল শান্তি উদ্যোগের অবমাননা করেছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো মুসুল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার নিন্দা করেছে, এটিকে অপরাধ বলে বর্ণনা করেছে তারা।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, “পবিত্র স্থানে রেড লাইন অতিক্রম না করার জন্য দখলদারদের হুঁশিয়ার করছি আমরা, এটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের বেইত উমর শহরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক ইসরায়েলি সেনা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।