‘আমরা সবাই চীনা’ তাইওয়ানের সাবেক প্রেসিডেন্ট
তাইওয়ানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মা ইং-চৌ বলেছেন, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের লোকজনই জাতিগতভাবে চীনা এবং তাদের পূর্বপুরুষও একই। ঐতিহাসিক চীন সফরের শুরুতে মঙ্গলবার নানজিংয়ে সান ইয়াৎসেন মুসোলিয়ামে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মা-র এই চীন সফরের ব্যাপক সমালোচনা করছে তাইওয়ানের বর্তমান শাসকদল। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত স্বশাসিত দ্বীপটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মা।
চীনের তৎকালীন প্রজাতন্ত্রপন্থি সরকার (কুওমিনতাং সরকার) গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে অনুসারীদের নিয়ে তাইওয়ান দ্বীপে চলে যায়। তারপর থেকে তাইওয়ানের সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে মা-ই হচ্ছেন প্রথম যিনি কমিউনিস্ট শাসিত চীন সফরে গেলেন।
চীনের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত দ্বীপটির ওপর বেইজিংয়ের কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ নিয়ে সৃষ্ট ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে এই সফর করছেন তিনি।
১৯১১ সালে শেষ চীনা সম্রাটকে উচ্ছেদ করে নতুন প্রজাতন্ত্রের সূচনা করা সান ইয়াৎসিনকে পূর্বাঞ্চলীয় নানজিং শহরেই সমাহিত করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে সানের অসামান্য ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন মা।
“তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের লোকজনই চীনা, এরা উভয়েই ইয়ান ও ইয়েলো সম্রাটদের বংশধর,” মা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে তার কার্যালয়।
তাইওয়ানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মা এখানে চীনা বলতে নাগরিকত্বকে ইঙ্গিত করেননি, জাতিগতভাবে চীনাদেরকে বুঝিয়েছেন। জাতিগতভাবে চীনাদের পূর্বপুরুষ কারা, তা বোঝাতে অনেকেই তাদেরকে ইয়ান ও ইয়েলো সম্রাটদের বংশধর হিসেবে অভিহিত করেন।
তবে অধিকাংশ তাইওয়ানি-ই নিজেদেরকে চীনা বলে স্বীকার করতে চায় না, বলছে একাধিক জনমত জরিপ। সান ইয়াৎসেনকে এখনও তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম রিপাবলিক অব চায়নার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিং সাম্রাজ্যকে উচ্ছেদে অসামান্য অবদান রাখায় চীনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টিও সানের ব্যাপক প্রশংসা করে। কিন্তু বেইজিং ও তাইপের সরকার একে অপরকে স্বীকৃতি দেয়নি।
রোববার হন্ডুরাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি, হন্ডুরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক মিত্রকে হারানোর পরপরই চীনে মা-র সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হন্ডুরাস সরে যাওয়ায় স্বশাসিত দ্বীপদেশটির সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক রাখা দেশের সংখ্যা কমে এখন ১৩-তে দাঁড়িয়েছে।
তাইওয়ানকে ঘিরে যে উত্তেজনা বিদ্যমান, তা কমাতে স্বশাসিত দ্বীপটির প্রধান বিরোধীদল কুওমিনতাংয়ের চেষ্টার অংশ হিসেবেই দলতির অন্যতম নেতা মা-র এবারের এই চীন সফর। কুওমিনতাং ঐতিহাসিকভাবেই চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হলেও তাদেরকে বেইজিংপন্থি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে নারাজ।
তাইওয়ানের এখনকার প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন একাধিকবার চীনের সঙ্গে আলাচনার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করা বেইজিং সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাইয়ের ভাষ্য হচ্ছে, তাইওয়ানের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল স্বশাসিত দ্বীপটির জনগণেরই আছে। কুওমিনতাং দলের ঊর্ধ্বতন সদস্য মা বলেছেন, শান্তির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
“উভয় পক্ষ যুদ্ধ এড়াতে ও শান্তির জন্য চীনকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবে বলে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করছি। এটা প্রণালীর উভয় পাশের চীনা জনগণের অনিবার্য দায়িত্ব এবং এর জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে,” বলেছেন তিনি।
এবারের সফরে মা-র সঙ্গে চীনের শাসকদলের ঊর্ধ্বতন কারও বৈঠক করার কথা নেই। মা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুরে বৈঠক করেছিলেন।