ইউক্রেনে অত্যাধুনিক লেপার্ড টু ট্যাংক পাঠালো জার্মানি
জার্মানি থেকে লেপার্ড টু ট্যাংকের প্রথম চালান ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউক্রেনীয় ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাদের ব্যবহারের জন্য ১৮টি অত্যাধুনিক ট্যাংক, যা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রধান সমরাস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়, তা সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন – তিনি নিশ্চিত যে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ট্যাংকগুলো “গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে”।
ইউক্রেন থেকে পাওয়া বিভিন্ন খবরে জানা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্য থেকে চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংকও ইউক্রেনে পৌঁছেছে।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মিত্র দেশগুলোর কাছে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদানের আহ্বান জানিয়ে আসছিল ইউক্রেন। ইউক্রেনকে ইতিমধ্যেই ট্যাংক দিয়ে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য।
অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নেটো জোটের কাছে শুধু ট্যাংক নয়, যুদ্ধবিমানও চাইছেন। যদিও এখনো কোন দেশই তা দেবার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ইউক্রেন সরকার এখনও লেপার্ড টু ট্যাংক চালানের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাজ্য থেকে চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংকের প্রথম চালান তারা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটি।
প্রায় দুই হাজার লেপার্ড টু ট্যাংক – যেগুলোকে বিশ্বের প্রথম সারির যুদ্ধ ট্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়- সেগুলোর সবই নেটো দেশগুলোতে উৎপাদিত এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করে।
শুরুতে অনিচ্ছুক থাকলেও, জানুয়ারি মাসে জার্মানি ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠাতে রাজি হয়। জার্মান আইন অনুযায়ী, বার্লিনকে অবশ্যই লেপার্ড টু ট্যাংক যেকোন দেশে পুনরায় রপ্তানি করার অনুমতি দিতে হবে।
আধুনিক স্থলযুদ্ধে ট্যাংক এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কারণ এটা শত্রুপক্ষের অবস্থান বা রক্ষণব্যূহ ভেদ করে সামনে এগুতে এবং জায়গা পুনর্দখল করতে বড় ভুমিকা রাখে। ট্যাংক চলার জন্য রাস্তা দরকার নেই, অসমান, উঁচু-নিচু, খানাখন্দে ভরা মাটির ওপর দিয়েও তা চলতে পারে।
একই সাথে ট্যাংক হচ্ছে এক চলন্ত কামান, যা যুদ্ধরত বাহিনীকে শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেঙে সামনে এগুনোর এবং গোলাবর্ষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। লেপার্ডের মত ট্যাংক যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র একদিকে যেমন রাশিয়ার বিরুদ্ধে রণক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে, সেই সাথে পশ্চিমা বিশ্ব বা নেটো জোটভুক্ত দেশগুলোকেও এ যুদ্ধে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলবে।
চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন যে “প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং যথা সময়ে ট্যাংকগুলো আমাদের ইউক্রেনীয় বন্ধুদের হাতে পৌঁছেছে”। জার্মান সেনাবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনীয় ট্যাঙ্ক ক্রুদের লেপার্ড টুয়ের অ্যাডভান্সড এ-সিক্স ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এগুলো রাশিয়ান টি-৯০ প্রধান যুদ্ধ ট্যাংকের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং অন্যান্য পশ্চিমা ট্যাংকগুলোর তুলনায় এটার রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং জ্বালানী-সাশ্রয়ী বলে মনে করা হয়। লেপার্ড টু ছাড়াও, জার্মানি ইউক্রেনকে দুটি বিশেষ ট্যাংক-পুনরুদ্ধার যান এবং ৪০টি পদাতিক যুদ্ধ যানও পাঠিয়েছে।
এদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইরিনা জোলোটার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, “যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে”।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ তার ফেসবুক পেজে মিত্রদের তৈরি সামরিক যানের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জার টু-এর একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ব্রিটিশ যানটি সামরিক শিল্পের অন্যতম একটি নমুনা। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তবে এর আগে তারা নিশ্চিত করেছ যে ইউক্রেনীয় ট্যাংক ক্রুরা ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ শেষে ট্যাংকের সাথে তাদের দেশে ফিরেছে।